সিনেমা না করেও এদের দৈনিক আয় ৫০ হাজার টাকা

এক সময়ে রুপালি পর্দা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন চিত্রনায়িকা মুনমুন,ময়ূরী, পলি, ঝুমকা, মেঘা, শাপলাসহ আরো অনেকে। তাদের রাজত্বের সময়কে চলচ্চিত্রে চিহ্নিত করা হয় ‘অশ্লীলতার যুগ’ বলে। ২০০৬ পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসায় নিজেদের অবস্থান হারিয়ে ফেলেন তারা।

চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যেতে হয়। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে দুয়েকজন খবরে এলেও বেশির ভাগেরই খবর নেই। কী করছেন তারা? চলচ্চিত্রে সুস্থ পরিবেশ ফিরে এলে ওইসব নায়িকারা ‘আখের’ গুছিয়ে চলচ্চিত্র থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের কেউ প্রবাসী হয়েছেন, কেউ হয়েছেন সংসারী। তবে মুনমুন-ময়ূরী অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও স্টেজ শো এবং সার্কাসের মঞ্চে এখনো দর্শক মাতিয়ে যাচ্ছেন! আর সেখান থেকে যা আয় করছেন তা সিনেমার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়!

মুুনমুন-ময়ূরীর এক ঘনিষ্ঠজনের বরাতে জানা গেছে, রমযান মাস ব্যতীত বাকি ১১ মাসই স্টেজ শো, সার্কাসের মঞ্চে পারফর্ম করায় তুমুল ব্যস্ত থাকেন মুনমুন-ময়ূরী। দেশের নামী সার্কাস পার্টির মধ্যে গ্রেট রওশন, লায়ন, অলিম্পিক, নিউ স্টার, রাজমনি, সাধনা-এসব সার্কাস পার্টির মালিকরাই নিয়মিত যোগাযোগ রেখে শো করান মুনমুন-ময়ূরীদের দিয়ে। ওই সব সার্কাসের মঞ্চে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন তারা। গ্রাম-গঞ্জে মুনমুন-ময়ূরীদের নামেই মুহূর্তে সব টিকেট শেষ হয়ে যায়!

তাদের আগমনের খবরে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় ওই সব সার্কাস অনুষ্ঠান! গ্রেট রওশন সার্কাসের কর্ণধার আততাব মিয়াঁ জানান, সার্কাসে প্রতিদিন ৩টি শো থাকে। তিন শোতেই একবার মঞ্চে উঠেন মুনমুন-ময়ূরী। যাতায়াত, থাকা-খাওয়া বাদে প্রতি অনুষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক নেন তারা। দুদিনে চুক্তি থাকে এক লাখ টাকা।

তিনি বলেন, মাসের ২০-২৫ দিনই কোনো না কোনো সার্কাস অথবা স্টেজে শো থাকে তাদের। মুনমুন-ময়ূরী যে সার্কাস পার্টিতে থাকেন সেখানে লোকসানের কোনো প্রশ্নই আসে না। মানুষের কাছে তাদের চাহিদা ব্যাপক।

জানা যায়, স্টেজে ময়ূরী জুটি বাঁধেন রানা নামে এক মিউজিক ভিডিওর মডেলের সঙ্গে। মুনমুন পারফর্ম করেন তার স্বামী রোবেনের সঙ্গে। এছাড়া মেঘা পারফর্ম করেন সংগ্রাম নামে একজন চলচ্চিত্র অভিনেতার সঙ্গে।

এছাড়াও প্রতিমাসে একাধিকবার শো করেন চিত্রনায়িকা রত্না, জেসমিন প্রমুখ। তবে সারাদেশে সার্কাস-স্টেজ শো নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা থাকে নাসরিন ও শ্রাবণ খানের। তারা সার্কাস-স্টেজ শো’র অঘোষিত ‘কিং-কুইন’। কয়েক বছরে জুটি বেঁধে শতাধিক সার্কাস পার্টি ও হাজার স্টেজ শো মাতিয়েছেন তারা।

কয়েকটি চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন শ্রাবণ খান। তিনি বলেন, বছরের প্রায় ১১ মাসই ব্যস্ততা থাকে স্টেজ অনুষ্ঠান নিয়ে। সঙ্গে থাকেন নাসরিন। স্টেজে আমাদের জুটির রসায়নই অন্যরকম। এতো পরিমাণে শো’র প্রস্তাব আসে সিডিউল মেলাতে সমস্যায় পড়ে যাই। অনেক সময় আমি যেতে না পারলে মুনমুন, ময়ূরীসহ অন্য যারা আছে তাদের দেই। তাদেরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। মাসের বেশিরভাগ সময় তারা এ কাজে ব্যস্ত থাকেন। বলতে গেলে, প্রতিমাসে সিনেমায় কাজের চেয়ে এখানে কয়েকগুণ বেশি উপার্জন হয়।

এ ব্যাপারে মুনমুন বলেন, আমার অভিনীত অনেক সিনেমার মধ্যে বলার মতো ‘রাগী’ এবং ‘তোলপাড়’ নামে দুটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এ দুটি সিনেমা মুক্তির পর দর্শকদের ফিডব্যাকের উপর নির্ভর করছে আগামীতে আমি সিনেমা করবো কিনা! আর সিনেমার বাইরে নিয়মিত স্টেজ শো করছি। এটা আমার খুবই ভালো লাগে।

মানুষ আমাকে টিকেট কেটে দেখতে আসে, আমি মঞ্চে উঠলে চিয়ার আপ শুরু করে। তখন আমার মধ্যে যে আমিত্ব আছে, সেটা জেগে ওঠে। মনে হয় আমি অনেক কিছু। মানুষ দূর থেকে কষ্ট করে টাকা দিয়ে আমাকে দেখতে আসছে। খুব গর্ববোধ করি তখন।

আরেক নায়িকা ময়ূরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে চাননি। তারই একজন ঘনিষ্ঠ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২৮ জানুয়ারি ময়ূরী শো করেছেন পঞ্চগড়ে। ময়ূরীর ভাই থাকেন লন্ডন। বছরে দুবার সেখানে তিনি ঘুুরে আসেন। থাকেন ২০ দিনের মতো। দেশে তার মূল পেশাই সার্কাস পার্টি ও স্টেজে শো করা। তিনি পুরোপুরি সচ্ছল।