দুনিয়ার সব আজব সেতুর মধ্যে একটি

বিনয় মজুমদার তার ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’ কবিতায় লিখেছেন ‘সেতু চুপে শুয়ে আছে, সেতু শুয়ে আছে তার ছায়ার উপরে’। চিত্রকল্পের বাস্তব চেহারা নিয়ে ময়মনসিংহের নান্দাইলের চিনহী খালের ওপর একটি সেতু দুই যুগ ধরে ‘পড়ে আছে’। দীর্ঘ দুই যুগেও সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক বসেনি। ফলে ‘দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি’।

নদ-নদী, খাল-বিল বা জলাভূমির ওপর সেতু নির্মাণ করা হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য। কিন্তু নান্দাইল পৌরসভার সর্বদক্ষিণে ৪ নং ওয়ার্ডের ভাটি কান্দাপাড়া মহল্লার গা-ঘেঁষে চিনহী খালের ওপর দীর্ঘ দুই যুগ আগে ১০৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রস্থের এই সেতুটি কেনো নির্মাণ করা হয়েছে, তা এলাকার মানুষের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। কেননা, সেতু দিয়ে যাতায়াতের জন্য কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে কোনো কাজে আসছে না সেতুটি। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের যদি কোনো কাজেই না আসে, তাহলে সেতু বানিয়ে লাভ কী?

স্থানীয়রা চলাচলের জন্য সেতুর উভয় প্রান্তে সিমেন্টের খুঁটি (সিমেন্টের পালা) বসিয়েছেন। যাঁদের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো, তাঁরা পর্বতারোহণের অনুভূতি নিয়ে খুঁটি বেয়ে সেতুতে উঠছেন, আবার নামছেন। অতিসতর্কতায় সেতুটিতে উঠা-নামা করতে হচ্ছে স্থানীয়দে। কারণ, সড়ক থেকে সেতুটি প্রায় ৬ ফুট উঁচুতে। এ সেতু দিয়ে লোকজন হেঁটে নান্দাইল সদরে যাতায়াত করেন। সেতু দিয়ে পারাপার না হলে স্থানীয় লোকজনের প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে পৌর সদরে যেতে হয়।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, নান্দাইল সদরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে চিমনি খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর ওপারে নান্দাইল পৌরসভার কান্দাপাড়া মহল্লা।

ওই মহল্লা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নান্দাইল পৌর সদর। কিন্তু এ সেতুর সুবিধা তাঁরা কখনো ভোগ করতে পারেননি। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতু দিয়ে কখনো কোনো যানবাহন চলেনি। এখন সেতুটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। আর কয়েক দিন পর হয়তো হেঁটেও চলাচল করা যাবে না।

মেরাকোনা গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আফসর আলী (৭৫) বলেন, সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতু দিয়ে চলতে আমার খুব কষ্ট অয়। তাই এখানে সড়কসহ নতুন একটি সেতু নির্মাণ করার দাবি জানাই। একই গ্রামের শাহজাহান মিয়া (৪৫) বলেন, সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় ভাটি কান্দাপাড়া ও মেরাকোনা গ্রামের লোকজনকে তাদের উৎপাদিত ফসল আনা-নেওয়া করতে তিন কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মাননীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান সেতুটি দেখে গেছেন কিন্তু তারপরেও কাজ হয়নি। এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। স্থানীয় শেরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মিল্টন ভুইয়া বলেন, এই সেতু নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে এলাকার মানুষ। সেতুটি নির্মানে গত প্রায় ৬ মাস পূর্বে জাইকার লোকজন এসে মাটি পরীক্ষা করে গেছেন।

তিনি আরো জানান, এখানে সড়কসহ নতুন একটি সেতু নির্মাণ করা হলে খুব সহজে নান্দাইল পৌরসভা ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে যাতায়াত করা যাবে। উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী শাহবো রহমান সজিব বলেন, এটি সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তারপর বিস্তারিত বলা যাবে।