বাড়ির ছাদে মুক্তা চাষে ঘুচল অভাব

মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই ইউটিউবে মুক্তা চাষের ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার এক্তারপুর গ্রামের আব্দুর রহমান। উৎসাহিত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তা চাষের খামার পরিদর্শন ও খামারিদের পরামর্শ নিয়ে বাড়ির পুকুরে অল্প সংখ্যক মুক্তা দিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছিলেন ওই তরুণ।

আশানুরূপ সাফল্য পেয়ে বাড়ির ছাদে পানির হাউজ করে প্রথমে পাঁচশ ঝিনুক দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষ শুরু করেছিল রহমান। এতে আসে অভাবনীয় সফলতা। অভাব-অনাটনের সংসারে জ্বলে উঠে আশার প্রদীপ। এরপর একে একে ঝিনুকের (মুক্তা) সঙ্গে রঙিন মাছের চাষ করে রীতিমতো এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।

অভয়নগর উপজেলার এক্তারপুর গ্রামের বাড়িতেই আব্দুর রহমানের এ ব্যতিক্রমী প্রকল্প। বর্তমানে সেই ঝিনুকের চাষ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় হাজারে।এছাড়াও ইতোমধ্যে তিনি ‘এ আর অ্যাগ্রো ফার্মিং মুক্তা চাষ’ নামে একটি ট্রেনিং সেন্টার খুলে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এতে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছেন আব্দুর রহমান।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আব্দুর রহমানের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা কবির হোসেন মিল শ্রমিকের কাজ করেন। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় সবাই যখন ঘরবন্দি ছিল ঠিক তখন শ্রমিক বাবাকে নিয়ে সংসারে সহযোগিতার জন্য কিছু একটা করার পরিকল্পনা করেন দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্র আব্দুর রহমান।

সেই অনুযায়ী ইউটিউব থেকেই মুক্তা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং বিভিন্ন খামারে ঘুরে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজে চাষ শুরু করেছিলেন। উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান বলেন, নতুন কিছু করার তাড়না থেকে ইউটিউব দেখে মুক্তা ও রঙিন মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। এখন আমি দেশের নামকরা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে গোল আকৃতির ও ডিজাইন মুক্তা সাপ্লাই করি। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা উৎসুক বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা পেলে মুক্তা ও রঙিন মাছের খামার আরও প্রশস্ত করতে পারবো। এতে করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থার ব্যবস্থা করা যাবে। উৎপাদনকৃত মুক্তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।আব্দুর রহমানের বাবা কবির হোসেন বলেন, ছেলের ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডে প্রথম থেকেই সহযোগিতা করেছি।

এখন তার সুফল ভোগ করছি। বাড়ির ছাদে রঙিন মাছের সঙ্গে কীভাবে মুক্তা চাষ হয়, সেটি দেখার জন্য প্রতিদিন দর্শনার্থী আসে।খুলনার দৌলতপুর থেকে প্রজেক্ট দেখতে আসা আমিনুর রহমান বলেন, বেকার যুবকরা এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

অভয়নগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ বলেন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোক্তাদের এমন নতুন নতুন উদ্ভাবনী আমরা প্রত্যাশা করি। উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে আমরা তার পাশে থেকে তাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ দেবো।