‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ আকাশ থেকে বানাই না, সমাজ থেকেই বানাই : অমি

কুদরত উল্লাহ: বর্তমান সময়ের বাংলা নাটকের যে কজন তরুণ নির্মাতা রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় কাজল আরেফিন অমি। তবে খুব অল্প সময়েই যে তিনি নির্মাণের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। এর জন্য বেশ পরিশ্রম, মেধা এবং সততা দিয়েই নিজেকে একজন সফল নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তার অনন্য কাজ দিয়ে হয়েছেন আলোচিত এবং প্রশংসিত আবার সমালোচিতও হয়েছেন।

তার নির্মিত সিঙ্গেল নাটকের সংখ্যা আসলে এখন আর গণনায় আনা যাচ্ছে না। অসংখ্য নাটক তিনি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। এই সিঙ্গেল নাটকের বাইরে বলতে গেলে আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে নাটকটি সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হুম পাঠক, একদম ঠিক ধরেছেন ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট। দীর্ঘ এই ধারাবাহিক নাটকটির দর্শক জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে একের পর এক সিজন নির্মাণ করে যাচ্ছেন তিনি।

দর্শকরা নিজ উদ্যোগে মানববন্ধন করে ব্যাচেলর পয়েন্টের নতুন সিজন দেখার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সিজন-৩ এর পর তিনি নাটকটির সিজন-৪ নির্মাণ করেন।

তবে সম্প্রতি প্রচার হওয়া এ নাটকের কয়েকটি পর্বের সংলাপ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর সমালোচনা শুরু হয়।

নেটিজেনদের আপত্তির মুখে সেসব পর্ব ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। ধ্রুব টিভির ইউটিউব চ্যানেল ঘুরে দেখা যায়-চতুর্থ সিজনের ৭৪, ৭৫,৭৬ ও ৭৭তম পর্ব মুছে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি ধ্রুব টিভির ভেরিফায়েড ফেসবুকে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন নাটকটির নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি।

নাটকের বিতর্কিত সংলাপ ‘যৌনকর্মীর ছেলে’ ব্যবহার প্রসঙ্গে নিমার্তা অমি বলেন, ‘যৌনকর্মীর ছেলে’ সংলাপটা নিয়ে অনেকের দ্বিমত ছিল। আমার পয়েন্টটা হলো আমরা কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে অনেক গালিই দিয়ে কিংবা শুনে থাকি, যা আসলে প্রকাশযোগ্য নয়। তাই ওই গালির পরিবর্তে নতুন একটি শব্দ যোগ করেছি। এই ধরনের শব্দ বাস্তব জীবনেও কিন্তু আমরা ব্যবহার করে থাকি। বাংলাদেশের নাটক-সিনেমায়ও এই শব্দগুলো ব্যবহার হয়। তাই সেসব শব্দের বদলে আমি ‘যৌনকর্মীর ছেলে’ শব্দটি ব্যবহার করেছি। যৌনকর্মী একটা শ্রেণিকে বোঝায়। যৌনকর্মী বলা তো তাদের জন্য স্বীকৃতি। কিন্তু আমরা চরিত্রের প্রয়োজনে বা নেগেটিভিটি বোঝানোর জন্য অনেকসময় মদ খাওয়া, ধর্ষণ, সিগারেট খাওয়া, মিথ্যা বলা, চুরি করা বা গালি ব্যবহার করি। সেই জায়গা থেকেই শব্দটা ব্যবহার করেছি।

এটা নিয়ে যারা নেগেটিভ মন্তব্য করেছে, এর মধ্যে আমি খেয়াল করে দেখেছি একটা লেখাই বিভিন্ন পেজে আপলোড করা হয়েছে। একটা মুষ্টিমেয় গ্রুপ যারা ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ পছন্দ করে না তারা এই লেখাটা লিখে বিভিন্ন পেজে আপলোড দিয়েছে। কিন্তু আমরা এই সংলাপটা মিউট করার জন্য আপাতত সেই পর্বগুলো প্রাইভেট করে রেখেছি। যারা ব্যাচেলর পয়েন্টকে আপাতত পছন্দ করছে না বা হেইট করছে তাদেরকে সম্মান জানিয়েই কাজটি করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ব্যাচেলর পয়েন্টের আসল দর্শক যারা তারা কিন্তু সবাই সংলাপটি পছন্দ করেছে। বিভিন্ন পোস্টে যারা নেগেটিভ মন্তব্য করেছেন, সেখানে গিয়ে কিন্তু তারা এটার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। সেই জায়গা থেকে কিন্তু আমি চাইলে সংলাপটা রেখেও দিতে পারতাম। কিন্তু সেটা করিনি। কারণ, যারা সংলাপটা অপছন্দ করছেন তারাও তো আমার দর্শক। তাদের সঙ্গে তো আমার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। ব্যাচেলর পয়েন্ট দেখছেন বলেই নেগেটিভ জিনিসগুলো তাদের চোখে পড়েছে।

ব্যাচেলর পয়েন্ট আমি আকাশ থেকে বানাই না। সমাজ থেকেই বানাই। এখানে তাই দেখানো হয় যা আমরা করি। আমরা বাস্তবজীবনে কিন্তু কারণে-অকারণে এর চেয়েও বেশি গালি ব্যবহার করি। তার ফিফটি পারসেন্ট হয়তো নাটকে দেখাতে পারি। বাংলাদেশে এখন কিন্তু ওটিটিতে গালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বিপি দেওয়া হয় না। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমায়ও অনেক গালি রয়েছে। সেটা কিন্তু মানুষ পরিবার নিয়ে দেখেছে। আর ব্যাচেলর পয়েন্টের শুরুতেই তো আমরা ডিসক্লেইমার দিয়ে দিচ্ছি। এটা কিন্তু অ্যাডাল্ট কনটেন্ট। এটা বাচ্চাদের জন্য না।

তারপরও দর্শকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমার জায়গা থেকে আমি আরও সতর্ক থাকব। আরও বেশি বিপ ব্যবহার করবো। দর্শকের ভালোবাসা নিয়েই নাটকটি তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, ব্যাচেলর পয়েন্টে অভিনয় করে মিশু সাব্বির, জিয়াউল হক পলাশ, মারজুক রাসেল, চাষী আলম, ফারিয়া শাহরিনসহ একাধিক তারকা আলোচনায় রয়েছেন। তাদের চরিত্রগুলোও পেয়েছে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে কাবিলা, হাবু ভাই, পাশা ভাই নাটকটির কল্যাণে ভাইরাল চরিত্র। কাবিলার প্রেমিকা চরিত্র রোকেয়াও সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে মজার মজার সংলাপের কারণে।