‘রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখি পরী বিছানায় নেই’

মাসখানেক আগেই পুত্রসন্তানের মা হয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। এরপর সন্তান, স্বামী, সংসার নিয়েই কাটছে এই নায়িকার ব্যস্ততা। মা হওয়ার পরে যেনো নিজেকে বদলে ফেলেছেন পরী। তেমনটাই জানালেন নাট্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী।

পরীকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে শুক্রবার একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন তিনি। পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল-

পরীমণি লিখেছে, আমার পদ্মফুল হাসে.. হাসবেই তো।এটাই তো হবার কথা ছিল মা। কী মায়া ছবিটি বলো! কিন্ত আমি লিখতে চাই অন্যকিছু। আসলে আমি ছবিতে আমার কোলে রাজ্যের মাকে নিয়ে লিখতে চাই, বলতে চাই।

আমাদের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, দূর থেকে আমরা নিজেদের মনগড়া কথা বলি।কিন্ত কাছে না গেলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। সত্যিই আমি রাজ্যের এই মাকে দেখে মুগ্ধ,আপ্লুত। যা দেখে বুঝে আমার চোখ ঝাপসা হয়েছে। অভিনয়শিল্পী পরী এবং রাজ্যের মা আকাশ আর পাতাল পার্থক্য। মেয়েরা মা হয় যখন, তখন নতুন মাকে তার গুরুজনেরা সাহায্য করেণ, কেউ কেউ বাবার বাড়ি, বড় বোনের বাড়ি চলে যায়,কেউ কেউ গৃহকর্মীর সাহায্য নেয়।এটা হতেই পারে।

খুবই স্বাভাবিক। কিন্ত পরীমণি মানে রাজ্যের মাকে দেখে আমি রীতিমতো অবাক এই এক মাস ৬ দিনে। সে নিজের হাতে রাজ্যের সব কাজ করেছে। নিয়ম করে ফিডিং (বাইরের ফিডার না) করানো,ড্রেস বদল করা,বিছানা করা,প্যাম্পারস চেঞ্জ করা,সন্তানের যাবতীয় কাজ করা এবং সাথে বাসার রান্নাও সেই করে (মেইন ফুড)।

ইভেন কাল তার সাথে অনেকদিন পর এক রাতে থাকাতে হঠাত আমি দেখলাম সে বিছানায় নেই।উঠে বাথরুমের কাছে যেতেই দেখলাম, বাচ্চার কাপড় নিজের হাতে ধুচ্ছে,অন্য শুকনা কাপড় আগেই ভাঁজ করছে নিজেই।

আর পরে ইস্ত্রি করছে। বললাম,মর্জিনাকে দিলেই তো ধুয়ে দিত। উত্তর দিলো,”মা,আমার ছেলের সব কাজ প্রতিদিন আমি পুরোটাই নিজের হাতেই করতে চাই,আমার সন্তান যেন মা হিসাবে আমার কাছ থেকে কোন রকম কোন অবহেলা/ত্রুটি না পায়। আর ওর কাজ আমি যতটা ভালোবাসা যত্ন দিয়ে করবো, অন্য কেউ কমই করবে।”

সারারাত দেখলাম, কতবার সে উঠলো, ফিডিং করালো,ওকে নিয়ে হাটলো।নিজেও চট করে এক ফাঁকে খেয়ে নিলো। এর ভিতরেও আতিথিয়েতার দিকেও সমান নজর। এই পরী কত ঘুম কাতুরে ছিল। কতবার ডাকতে হতো। আর এখন সেই পরী একটু নড়াচড়ার আওয়াজ পেলেই জেগে যায়। ওর একমাত্র জগত ওর রাজ্য।

ভোর হয়। আমরা সূর্য ওঠাও দেখি। সাথে তার সারাক্ষন হাসি মাখা মুখ।নেই নিজের জন্যে কোন কমপ্লেইন। অথচ চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। বললো, এতটুকু বাচ্চাকে রেখে কী করে থাকে একজন মা?

মায়া লাগেনা?৭/৮ মাস কোন কাজ করার কথা ভাবতেও পারিনা আমি। ওর কথা শুনে শুনে আমার নিজের কথা আস্ক করলো, আমারও সব মনে হয়ে গেলো। আমার বিয়ে হয় ১৯ বছর ২ দিনে। একটা মানুষ ছিলনা বাসায় বাচ্চা ধরার। কাজের লোক ছিল ছুটা। এক বছর ২ মাস ১০ দিনের ছোট বড় আমার ছেলে মেয়ে! সেইদিন গুলোর কথাই অনেকদিন পর মনে পড়ে গেলো রাজ্যের মাকে দেখে। আহা!

পরী, তুমি সত্যিই পেরেছ।তোমার জন্যে অনেকের দোয়া প্রার্থনা আছে। তাই তোমার সবকিছু সুন্দর ভাবেই হয়েছে। স্বার্থক মা হয়েছো তুমি।সামনে আরো তা পূর্ণ হবে যা আমি দেখতে পাচ্ছি।

আমি জানি, তুমি যখন আবার কাজ শুরু করবে, তখন সেইভাবেই দর্শকের সামনে আসবে। তুমি পেরেছো, পারবে আমি নিশ্চিত। তোমার মুখে সারাক্ষন এই হাসি যেন এইভাবেই থাকে, মন থেকে এই আশির্বাদ/ প্রার্থনা সব সময়।

পরী, তুমি তোমার নিজের মাকে পাওনি। কিন্তু রাজ্য বড় হয়ে অনেক গর্ব করবে তোমাকে নিয়ে যে কত বাধা, প্রতিকূলতা, মানষিক চাপ নিয়ে হাসি খুশিতে একজন মা তার রাজপুত্রের জন্ম দিয়েছে। প্রাউড অফ ইউ মা। অনেক সুখে থেকো রাজ্য আর রাজ কে নিয়ে।

হয়ত একদিন তুমি মায়েদের আইডল হয়ে যেতে পারো। সেইদিন বেশি দূরে না। ভালোবাসি তোমাকে অনেক যা বলা হয়ে ওঠেনা। এও জানি তোমার আমার পবিত্র সুন্দর সম্পর্ক থাকবে অনন্তকাল। আমি থাকি বা না থাকি তুমি থাকবে আজীবন, আমৃ”’ত্যু আমার মনের ভিতর।