সৃষ্টিজগতের সীমা নেই। প্রকৃতির নানা স্থানে আকর্ষণ লুকিয়ে রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা। জলে-স্থলে রয়েছে বিস্ময়। নীল তিমি কিংবা হাঙরের কথা প্রায়ই শোনা যায়। তিমির বমির দাম যে কোটি টাকা- সে কথাও অনেকে জানেন। সমুদ্রের আরেক বিস্ময় এমন এক মাছ যার পেটে থাকে কোটি টাকার সম্পদ। এই মাছের নাম স্টার্জন।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট’ নাটকের কথা মনে আছে? যেখানে বলা হয়েছিল ধনীদের খাবার ক্যাভিয়ার। এই ক্যাভিয়ার থাকে স্টার্জন মাছের পেটে। ক্যাভিয়ার দেখতে মুক্তার মতো চকচকে এবং চমকপ্রদ! ক্যাভিয়ার স্টার্জন মাছের নানা প্রজাতির পেট থেকে নানা রঙের হয়। কালো, কমলা, সবুজ, হলুদ, বাদামী এবং ধূসর রঙের ক্যাভিয়ার পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি দাম ব্লাক ক্যাভিয়ারের। বিশ্বের সেরা সুস্বাদু খাবারের মধ্যে এটি অন্যতম।
বিশ্বে প্রায় ২৬ ধরনের স্টার্জন মাছ পাওয়া যায়। এক সময় বিভিন্ন সাগরে স্টার্জন দেখা গেলেও বর্তমানে এর দেখা মেলে কৃষ্ণ সাগর ও কাসপিয়ান সাগরে। রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য ঐতিহাসিকভাবে ক্যাভিয়ার উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। চীনে সবচেয়ে বেশি ক্যাভিয়ার পাওয়া গেলেও সেই মাছগুলো ফার্মে চাষ করা হয়। সবচেয়ে উন্নত ও দামী ক্যাভিয়ার আসে বেলুচা স্টার্জন মাছ থেকে।
নারী স্টার্জন থেকে পাওয়া যায় ক্যাভিয়ার। একেকটি মাছের পেটে ক্যাভিয়ার আসতে সময় লাগে ১০-১৫ বছর। একেকটি স্টার্জন ১০০ বছরের মতো বেঁচে থাকে। শুরুর দিকে এসব মাছের পেট কেটে ডিম বের করা হতো। প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এখন মাছের পেট না কেটেই ক্যাভিয়ার বের করে নেয়া হয়।
ক্যাভিয়ারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা শরীরের রক্ত জমাট হতে দেয় না। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওভাসকুলার ও মস্তিষ্কের জন্য দারুণ উপকারী। ক্যাভিয়ারে সেলেনিয়াম নামে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। সেলেনিয়াম আমাদের ইমিউন সিস্টেম এবং স্বাস্থ্যকর থাইরয়েড ফাংশনের জন্য ভালো। ক্যাভিয়ারে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ থাকে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে অধিক পরিমানে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন রয়েছে। ক্যাভিয়ারে থাকা ভিটামিন বি-১২ শরীরে লাল কোষ তৈরি করে না এবং ক্লান্তি, হতাশা এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে।
ক্যাভিয়ার সংগ্রহের সময় সতর্কতার সাথে ডিমের সাথে থাকা আশ ও চর্বি সরিয়ে ফেলা হয়। লবণ মাখিয়ে অনেক সময় ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। ক্যাভিয়ার চাইলে এমনি খাওয়া যেতে পারে। তবে বেশিরভাগ মানুষ পাউরুটি কিংবা সিদ্ধ ডিমের সাথে এটি খায়। কেউ বরফ মিশিয়ে বা পানীয়র সঙ্গে খায়। ধনকুবেরদের জন্মদিন, বিয়ে বা যে কোনো পার্টি ক্যাভিয়ার ছাড়া অসম্পূর্ণ। স্টার্জন মাছের বিলুপ্তি ও ধনকুবেরদের চাহিদার কারণে এই খাবার এখনো নাগালে আসেনি মধ্যবিত্তের।
তবে ক্যাভিয়ার ১৯ শতকে ইউরোপের হোটেলগুলোতে ফ্রি দেওয়া হতো। রাশিয়া থেকে আসা জেলেরা ডায়েট হিসেবে খেতেন ক্যাভিয়ার। এটি তারা আলু দিয়ে রান্না করে খেতেন। রাশিয়ান জেলেরা এটিকে ‘রো’ বলতো। তখন ক্যাভিয়ার ছিল আজকালের বাদামের মতো সহজলভ্য। কিন্তু এই মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। ফলে দামও আকাশচুম্বী। প্রতি কেজি ক্যাভিয়ারের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০-২৫ লাখ টাকা। মাছ ও ক্যাভিয়ারের রং ভেদে এর দাম কম-বেশি হয়ে থাকে।