বেঁধে দেওয়া আমানতের সুদ হারের সীমা আগেই তুলে নেওয়া হয়েছে। এবার উঠে যাচ্ছে ঋণের সুদহারের বেঁধে দেওয়া সীমাও। অচিরেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিতে হচ্ছে। ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণের সুদহার বাড়লে আমানতের সুদহারও বাড়বে। তাতে স্বস্তি পাবেন সুদ আয়নির্ভর আমানতকারীরা। তবে ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবসময়ই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। ঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়টিও অর্থনীতির বাস্তবতার আলোকে হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ব্যাংকের আমানতের ওপর বেঁধে দেওয়া সুদহার তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার পুরোপুরি তুলে নেওয়া হলো। এ ছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়ানোরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বর্তমানে ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়িয়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অন্যান্য ঋণের বেঁধে দেওয়া সুদহার তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকবে। নতুন মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমানতের সুদহার উন্মুক্ত করে দেওয়া ও ঋণ সুদহারে কিছুটা শিথিল করায় তা আমানতের সুদহার বাড়াতে সহায়তা করবে।
যদিও ঋণের সুদহারের সীমা তুলে না নেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘোষণার সুফল পাচ্ছে না আমানতকারীরা। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের আগস্টে আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার ৯ ও আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি যেখানে উঠেছে, তাতে ব্যাংকগুলোকে আমানতের সুদহারও বাড়াতে হয়। কিন্তু ঋণের সুদ নির্দিষ্ট থাকায় ঋণ ও আমানতের সুদের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদহার তুলে নেওয়ার দাবি করে আসছিল।
এদিকে ঋণের সুদহারের সীমা ছাড়াও আগামী জুনের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা বিষয়ে আইএমএফের দেওয়া অন্যতম দুটি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এরমধ্যে ডলারের বিভিন্ন ধরনের দর তুলে দিয়ে বেচা ও কেনা দাম নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করতে হবে। এর বাইরে আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ ও বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
ব্যাংক খাতে এমন বেশ কিছু শর্ত পূরণের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে আইএমএফ গত সোমবার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এরইমধ্যে এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার বাংলাদেশ পেয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ঋণ কর্মসূচি চলাকালে (২০২৬ পর্যন্ত) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি, রাজস্বে স্বচ্ছতা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এই প্রতিশ্রুতি দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করতে হাতে সময় আছে মাত্র পাঁচ মাস।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আইএমএফের চাওয়া ছাড়াই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তিনি বলেন, কাগজে কলমে বেশি দেখানোর বদলে রিজার্ভের হিসাবও ব্যবহারযোগ্য সম্পদের ভিত্তিতেই করা উচিত।
আইএমএফের মতে, এতে দেশের নিট রিজার্ভ কমে আগামী মার্চে দুই হাজার ২৯৪ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে। সংস্থাটির হিসাবে আগামী জুনে নিট রিজার্ভ বেড়ে দুই হাজার ৪৪৬ বিলিয়ন ডলার ও ডিসেম্বরে দুই হাজার ৬৮১ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা আছে, যা আইএমএফ রিজার্ভের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করার পরামর্শ দিয়েছে। বর্তমান রিজার্ভ থেকে এই ৮০০ কোটি ডলার বাদ দিলে তাতে নিট রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.