পাঁচ বছর গবেষণার পর পাহাড়ে চাষ উপযোগী কফির জাত উদ্ভাবন করেছে রাঙামাটির রাইখালীতে অবস্থিত পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। এই জাত ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হলে দেশে কফি চাষের নতুন বিপ্লব আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণার পর ‘এ্যারাবিকা’ ও ‘রোবাস্টা’ নামের দুটি উন্নত কফির জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার মধ্যে এ্যারাবিকা জাতের কফি বিশ্বসেরা। তাদের এই উদ্ভাবিত জাতের কফির নাম দেয়া হয়েছে বারি কফি-১ ও ২। যা আগামী দুই বছরের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষাবাদের আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। যা ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি পাহাড়ের কৃষিতে নতুন নতুন ফলের জাত উদ্ভাবন করে সফলতা বয়ে এনেছে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত প্রায় বিভিন্ন ফলের ১৯টি জাত উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছে। তবে এবার কফির নতুন দুটি জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাহাড়ের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, নতুন উদ্ভাবনকৃত কফির জাতটির বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম, পাহাড়ি অঞ্চলের যেকোনো এলাকায় ছায়াযুক্ত স্থানে এর আবাদ করা সম্ভব। ফলে এটি বিভিন্ন বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কফি চাষ শুরু করার তিন থেকে চার বছর পর গাছে ফল আসা শুরু হয়ে যায় এবং প্রতিটি গাছ থেকে ৪ থেকে ৫ কেজি কফি ফল পাওয়া সম্ভব। সে হিসাবে বাগানে প্রতি হেক্টরে ৭ থেকে ৮ মেট্রিক টন কফি ফল উৎপাদন সম্ভব হবে। আবার কফি সাথী ফসল হওয়াতে আলাদা খরচ কিংবা পরিচর্যারও তেমন প্রয়োজন হয় না। কফির চাষ অনেকটা সহজ হওয়ায় এটি চাষে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ বাড়ছে।
স্থানীয় চাষি মো. জসিম উদ্দিন জানান, সাথী ফসল হওয়ায় কফি আবাদে আলাদা খরচ ও পরিচর্যার তেমন প্রয়োজন হয় না। কফি বাগান সৃজনে আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চাষে খরচ কম হওয়ায় চাষিদের মাঝেও আগ্রহ বাড়ছে কফি চাষে। অনেক ক্রেতাও ইতোমধ্যে বাগান দেখতে আসতে শুরু করেছেন।
কফি চাষে জড়িত মো. সামশুল হক জানান, কফিতে ফলনটা ভালো আসে। বিশেষ করে এই কফি চাষ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। যেকোনো বাগানে সাথী ফসল হিসেবে লাগানো যায়। অন্য গাছের ছায়া পেলেই এই কফি চাষের ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। তাই চাষিরা আশা করছেন, কফি চাষের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
কাপ্তাই রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নিজাম উদ্দীন জানান, বিশ্বসেরা এ্যারাবিকা জাতের এই কফি যেহেতু আমরা পাহাড়ি এলাকায় আবাদ করে সফলতা পেয়েছি, তাই আমরা এটি মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। আমরা আশা করছি, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পাহাড়ের প্রত্যেকটা স্থানে এই কফির আবাদ শুরু করতে পারবো। এছাড়া বাংলাদেশে কফির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং বিশ্বে কফি একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত। তাই পাহাড়ে কফি চাষের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি অঞ্চল কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, কফি চাষ করার পদ্ধতিটা যেমন সহজ তেমনি পরিবহন করাও সহজ এবং কফি সংরক্ষণেরও সুবিধা রয়েছে। তাই আশা করা যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে কফি চাষ বাড়ানো গেলে সফলতা পাওয়া সম্ভব হবে।-চ্যানেল২৪।