অ্যালবাট্রস এক ধরণের সামুদ্রিক পাখি। অ্যান্টার্কটিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরের আশেপাশে এদের দেখা পাওয়া যায়। দৈত্যাকার এই পাখি। মনে করা হয় যে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ ভ্রমণকারী অ্যালবাট্রস । এরা একটানা শত শত মাইল পাড়ি দিতে পারে।
সময়ের বিবেচনায় জীবনের বেশিরভাগ সময় উড়ে থাকে। তবে প্রজননের সময় ভূমিতে নেমে আসে। এদের একেকটি ডানা প্রায় ১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা। এরা স্কুইড, মাছ, কাঁকড়া এবং আরো কিছু জলজ প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে।
অ্যালবাট্রোজ বছরে কেবল একটি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা বের হয়, এবং আরো তিন সপ্তাহ বাবা-মা ছানার দেখভাল করে। প্রায় ৩-১০ মাসের মধ্যে বাচ্চাগুলো উড়তে শিখে যায়, এবং একসময় বাসা ছেড়ে উড়ে চলে যায়। এই সামুদ্রিক পাখি বাঁচে ১২ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত।
অ্যালবাট্রস পাখি দীর্ঘদিন একই সঙ্গীর সঙ্গে কাটিয়ে দেয়। অনেকটা মানুষের বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকার মতো। আবার মানুষের মতোই তাদের মধ্যেই আলাদা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিচ্ছেদ বাড়ছে অ্যালবাট্রস ‘কাপল’দের মধ্যে।
এই পাখিগুলোকে মূলত জোড়ায় দেখতে পাওয়া যায়। এক গবেষণায় উঠে এসেছে সম্পূর্ণ অন্য তথ্য। প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি-তে প্রকাশিত হয়েছে, আপাত ভাবে মনোগ্যামাস মনে হলেও পরিবেশের ভিত্তিতে এরা সঙ্গী নির্বাচন করে। তার উপরেই নির্ভর করে সঙ্গীর সঙ্গে থাকার স্থায়ীত্ব।
বিজ্ঞানীরা আরও জানাচ্ছেন, মূলত প্রজননে ব্যর্থ হলে তখনই নতুন সঙ্গী খুঁজে নেয় অ্যালবাট্রস। তবে শুধু পুরুষেরা নয়, নারী সঙ্গীও নতুন সঙ্গী খোঁজে।
গত কয়েক বছরে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে। যত দিন যাচ্ছে বেড়েছে তাদের বিচ্ছেদের সংখ্যা। জলবায়ু পরিবর্তনে তাপমাত্রা বাড়ছে সমুদ্রের পানির। ফলে মাছেরা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা পানির দিকে চলে যাচ্ছে। অ্যালবাট্রসকে খাদ্যের জন্য অনেক দূরে যেতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ব্রিডিং সিজনের আগে যদি অ্যালবাট্রস ফিরতে না পারে, তা হলে তার সঙ্গিনী অন্য সঙ্গী বেছে নেয়।