এমন এক খবর দেব, শুনলে চমকে যাবেন। আপনার রাতের ঘুমও নষ্ট হতে পারে। কেবলই আফসোস হতে পারে- আহা, কী করেছি আমি! নিজ হাতে পানির দামে বেচে দিলাম সোনার খনি! হ্যাঁ, আপনার পুরোনো অথবা নষ্ট হওয়া ল্যাপটপ, কিংবা মোবাইল ফোনের কথাই বলছি।
পাড়ায়-মহল্লায় যখন আপনার ঘুম ভাঙে ভাঙ্গারিওয়ালাদের ‘নষ্ট ল্যাপটপ, নষ্ট সিপিও, নষ্ট মোবাইল থাকলে বিক্রি করতে পারেন’ চিৎকারে; তখনই আপনার সর্বনাশটা হয়ে যায়। আর যখন শুনবেন নামমাত্র দামে বেচে দেওয়া আপনার ও অন্যদের ওই ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনগুলো দিয়ে শত শত কেজি সোনা তৈরি হচ্ছে- তখন তো আপনার মাথায় হাত দিয়ে বসে যাওয়ারই কথা। হ্যাঁ, বিবিসি জানিয়েছে, এমনই এক পেটেন্ট আবিষ্কার করেছে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল মিন্ট নামের একটি কোম্পানি।
তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে ইলেকট্রনিক বর্জ্য বেড়েই চলেছে। আর এ বিষয়টিকে কাজে লাগাতে এসব ই-বর্জ্যের ভেতরে লুকোনো মূল্যবান ধাতুগুলো বের করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে রয়্যাল মিন্ট। কার্ডিফের সাউথওয়েলসের কাছে এই কোম্পানিটির কারখানায় ৩০টিরও বেশি দেশের কয়েন তৈরির জন্য বিশ্ববিখ্যাত। দুই বছর ধরে তারা যুক্তরাজ্যের সরকারি মুদ্রা নির্মাতা। এই কোম্পানিরই রসায়ন বিশ্লেষকদের একটি দল কানাডিয়ান স্টার্ট-আপ এক্সিরের সঙ্গে এমন একটি পেটেন্ট আবিষ্কারের দাবি করেছেন- যার মাধ্যমে বাতিল হয়ে যাওয়া ল্যাপটপ, কম্পিউটারের অন্যান্য এক্সেসরিজ ও পুরোনো মোবাইল ফোনের ভেতরের সার্কিট বোর্ডগুলো থেকে ৯৯ শতাংশ সোনা বের করছেন তারা। তাদের এ প্রক্রিয়া পুরোদমে চালু হলে প্রতি বছর শত শত কিলোগ্রাম সোনা উৎপাদনে সক্ষম হবে।
পেটেন্টটি গোপন রাখলেও তাদের ডেমো ল্যাবরেটরির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খণ্ডিত সার্কিট বোর্ডের সঙ্গে নিজেদের তৈরি ‘ম্যাজিক গ্রিন দ্রবণ’ মিশ্রণের পরই সোনা তৈরির প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। চার মিনিটের মধ্যে ওই মিশ্রণে থাকা সোনা দ্রবীভূত হয়ে তরল আকারে বেরিয়ে আসে। একইভাবে ২০ বার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে দ্রবীভূত সোনার ঘনত্ব বেড়ে যায়। সোনার এই ঘন দ্রবণ ফিল্টার করার পর একটি বিশেষ চুল্লিতে গলিয়ে নাগেটের আকার দেওয়া হয়- যেগুলো দিয়ে কানের দুল, নেকলেস ও অন্যান্য অলঙ্কার তৈরি করা যায়।
রয়েল মিন্ট যুক্তরাজ্যের ৫০টি ই-বর্জ্য সরবরাহকারী নেটওয়ার্ক থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত ইলেকট্রনিক সামগ্রী সংগ্রহ করে আসছে। কোম্পানিটির ম্যানুফ্যাকচারিং ইনোভেশনের পরিচালক টনি বেকার জানিয়েছেন, এসব কাঁচামাল থেকে সার্কিট বোর্ডগুলো যান্ত্রিকভাবে আলাদা করে সোনাবিহীন অংশগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর ইউএসবি পোর্টের মতো সোনাবহনকারী অংশগুলোকে ৫০০ লিটারের চুল্লিতে পাঠানো হয়। যেখানে বড় স্কেলে ম্যাজিক গ্রিন দ্রবণ যোগ করা হয়। এরপর সেগুলো অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সোনার নাগেটে পরিণত হয়। বিবিসির প্রতিবেদনটি আরও জানিয়েছে, টোকিও অলিম্পিকের জন্য ৫ হাজার স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক তৈরি করতে ৬ মিলিয়ন মোবাইল ফোন এবং প্রায় ৭২ হাজার টন ই-বর্জ্য থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা হয়েছিল।
এখন ভেবে দেখুন- আপনার প্রযুক্তি জীবন থেকে কী পরিমাণ সোনা হারিয়ে ফেলেছেন। নিশ্চয়ই আর কোনো ব্যবহৃত ই-পণ্যকে অবহেলা করবেন না, কিংবা কম দামে বেচে দেবেন না।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.