সুইস ব্যাংক ব্যবস্থায় গোপনীয়তা রক্ষার ইতিহাস প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। এ ব্যাংকে এডলফ হিটলারেরও টাকা রাখার নজির আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখলে মুনাফা পাওয়া যায় না, বরং বাড়তি খরচ আছে। গ্রাহকের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো। কর ফাঁকি দেয়া, দুর্নীতি বা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাখা হয় বলে এসব ব্যাংকে ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যদিও বৈধ অর্থও রাখেন এ ব্যাংকের গ্রাহকেরা।
সুইস ব্যাংকগুলোতে ১৯৩০ এর দশক থেকে অর্থ রাখে। সে সময় জার্মানির ইহুদিরা নাৎসীদের শুদ্ধি অভিযানের মুখে পড়ে, তাদের অর্থ গোপন ব্যাংক একাউন্টে রাখার জন্য সুইস ব্যাংকগুলোকে বেছে নেয়। ফলে ব্যাংকগুলো এক ধরণের ব্যবসায়িক সুবিধা হাসিল করে। পরে ফ্রান্সের কয়েকজন রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ী তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সুইস ব্যাংকে রাখেন। এ তথ্য ব্যাংক থেকে ফাঁস যায়।এরপর ১৯৩৪ সালে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করে।
সুইস ব্যাংক ব্যবস্থায় গোপনীয়তা রক্ষার ইতিহাস প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। যার ফলে তৃতীয় বিশ্বের দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে ইউরোপ-আমেরিকার কর ফাঁকি দেয়া বিত্তশালী ব্যবসায়ীরা সবাই তাদের অর্থ গোপন রাখার জন্য বেছে নেন সুইস ব্যাংকগুলো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুইটজারল্যান্ডের ওপর চাপ বেড়েছে এরকম অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। উল্লেখ্য, ১৮৪৮ সালে গঠিত হয় সুইস ফেডারেশন।
শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক কাঠামো দেশটিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেয়। এ দেশে মুদ্রাস্ফিতি কম যা ব্যাংকের গোপনীয়তার নীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়। ১৮১৫ সালে সুইজারল্যান্ড একটি নিরপেক্ষ দেশের মর্যাদা পেলে সুইস ব্যাংকে অর্থপ্রবাহ অনেক বেড়ে যায়।
বিবিসির তথ্য, সুইস ব্যাংকগুলো উৎস জানতে চায় না, অর্থ বৈধ নাকি অবৈধ পথে উপার্জিত সেটা জানতে চায় না, গ্রাহকের পুরোপুরি গোপনীয়তা রক্ষা করে। তারা অন্য কোন দেশের কাছে গ্রাহকদের তথ্য দেয় না, দেশটিতেও স্থিতিশীলতা রয়েছে, এসব কারণেই তারা সারা বিশ্বের টাকার মালিকদের বিশ্বস্ততা বা নির্ভরতা অর্জন করেছে।