চলতি বছরের মৌসুমি আম এখন নেই বললেই চলে। কিছু স্থানে আম থাকলেও তা পরিমাণে অনেক কম। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে স্বপন (৩৮) নামে এক চাষির বাগানে এখনো ঝুলছে প্রায় ৮০০ মণ বারোমাসি আম। কিছু গাছে মুকুলও রয়েছে। আর প্রায় ৫০টি গাছে রয়েছে আমের গুঁটি। সেগুলো বিক্রি হবে আরও দুই মাস পরে। এবার প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন স্বপন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, এই বারোমাসি কাটিমন আমে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সারাবছর আমটি থাকায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি স্বপনের আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কাটিমন, ফিলিপাইন সুপার, বারি-১১, বারোমাসি খিরসাপাতসহ কয়েক জাতের প্রায় ৭০০-৮০০ মণ আম গাছে ঝুলছে। এর পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২০ জন শ্রমিক।
স্বপন বলেন, ছয় বছর আগে বারোমাসি আম চাষ শুরু করেছিলাম। ইচ্ছা ছিল শীতের সময়ে আম বিক্রি করবো। তাই প্রায় এক হাজার বারোমাসি জাতের আম গাছ রোপণ করেছি। এ থেকে গত বছর প্রায় ১৮ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। আর এবার প্রায় নয়শো গাছে ৭০০-৮০০ মণ আম আছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমগুলো চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। আশা করছি, প্রায় আরও ১ কোটি ১০ লাখ টাকা পাবো। এই আমের চাষ বাড়াতে গড়ে তুলেছি কাটিমনসহ বিভিন্ন জাতের গাছের নার্সারি। গাছও বিক্রি করে থাকি।
স্বপনের আম বাগানের পরিচর্যাকরী তুষার হোসেন বলেন, গত বছর থেকেই এই বাগানের সবকিছুর দেখভাল আমিই করি। এবারও করছি। কিন্তু বর্তমানে একটি পোকা আমে আক্রমণ করছে। এই পোকা যে আমের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সে আমটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছি না। এই আম বর্তমানে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
আব্দুর রহিম নামে স্বপনের আম বাগানের এক শ্রমিক বলেন, গত তিন মাস সিজনাল আম থাকায় বিভিন্ন স্থানে আমের বাগানে কাজ করেছি। কিন্তু ১৫ দিন আগে আম শেষ হওয়ায় কাজ ছিল না। বাড়িতে বসেছিলাম। তাই স্বপন ভাইয়ের বাগানে কাজে এসেছি। ১০ দিন থেকে করছি। আরও প্রায় দুই মাস করতে পারবো। দিনে ৩০০ টাকা মজুরি পাই। আমরা এখানে প্রায় ২০ শ্রমিক কাজ করি।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরে সিজনাল আমে চাষিরা লোকসান করে বারোমাসি আম চাষে ঝুঁকছেন। এতে লাভবানও হচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে আওয়াল ও স্বপন বেশি লাভবান হয়েছেন। এই বারোমাসি কাটিমন আম বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আর আমটি দেখতে ও স্বাদে ভালো হওয়ায় বিদেশে রপ্তানিরও দ্বার খুলবে। এই উপজেলায় মোট ৮০ হেক্টর জমিতে কাটিমন আম আছে।