চাঁপাইনবাবগঞ্জের নতুন সৃজন হওয়া বাগানগুলোয় কাটিমন আমের চাষাবাদ হচ্ছে। চলতি রমজান মাসে আমের চাহিদা মেটাচ্ছে নাবী জাতের এই আম। জেলার ভোক্তাদের পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের দূরবর্তী জেলাগুলোর বাজারে বাগান মালিকরা পৌঁছে দিচ্ছেন বারো মাসি সুমিষ্ট এই আম।
কাটিমন আমের বাগান মালিকরা বলছেন- সাধারণত বছরের মে থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত ৪ মাসকে আমের মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু, নাবী জাতের কাটিমন আম উৎপাদন করা যায় বারো মাসই। এবার রমজান মাসকে সামনে রেখে কাটিমন আম চাষাবাদ করেছেন তারা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গতবছর রমজান মাসে কাটিমন বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পেয়েছিলেন। এরই ফলশ্রুতিতে এবারও রমজানকে সামনে রেখেই বাগানে কাটিমন আম ফলিয়েছেন। যা এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক হাজার মণ কাটিমন আম বাজারজাতের প্রত্যাশা তাদের।
জেলার কৃষি অধিদপ্তর জানায়, বাজারে চাহিদা থাকায় কাটিমন আমের চাষাবার বাড়ছেই। গতবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৯৭ হেক্টর জমিতে কাটিমনের আবাদ করেছিলেন বাগান মালিকরা। এবার ৪৮১ হেক্টর বেড়ে জেলায় কাটিমন আম আবাদ হচ্ছে ৮৭৮ হেক্টর জমিতে।
সরজমিনে কাটিমন আমের বাগানগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট সারিবদ্ধ গাছ। গাছগুলোর মুকুলের ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে সুমিষ্ট কাটিমন আম। একই গাছে পরিপক্ক আম ও মুকুলের ভারে ভেঙে পড়ছে গাছের ডালপালা। এসব মুকুলের ডোগা ভেঙে ডালে ঝুলতে থাকা আমগুলো রক্ষায় চলছে চাষিদের কর্মযজ্ঞ। পরিপক্ব আমগুলোকে গাছ থেকে নামিয়ে নিচ্ছিলেন তারা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের আম চাষি রুবেল হোসেন। গতবছর থেকেই রমজান মাসকে সামনে রেখে চাষাবাদ করেছেন সুমিষ্ট কাটিমন আম। প্রায় ২৫ বিঘা আমবাগান থেকে রমজান মাসে ২৫০ মণ কাটিমন জাতের আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা তার। মণপ্রতি ১৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে বাগান থেকে এবার ৩০ লাখ টাকা লাভের আশা এই বাগান মালিকের।
রুবেল হোসেন বলেন, মৌসুম ছাড়াই কাটিমন আমের উৎপাদন হয় বলে বাজারে এর চাহিদা অনেক। রমজানে এই আম সাড়ে ৩০০-৫০০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায়। এই আম খেতে অনেক সুস্বাদু হওয়ায় ভোক্তারা বেশি দাম দিয়ে কিনে থাকেন।
কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই আম চাষাবাদ করে দাম ও বাজারজাত নিয়ে করতে কোনো চিন্তা করতে হয় না। বাগান থেকেই এই আম কিনে নিয়ে যান ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
অপর আম চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে আমের চাহিদা থাকায় কাটিমনের আবাদ করেছি। অনান্য সময়ের তুলনায় এসময়ে কাটিমন আমের দাম ভালো পাওয়া যায়। বাগানের গাছে থাকা পরিপক্ব আমগুলো গাছ থেকে নামিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, সাধারণত সময়ের বাইরে আমের চাহিদা বেশিই থাকে। চাহিদা বেশি থাকার কারণে ভালো দাম পাওয়ায় পরিকল্পিত পদ্ধতিতে কাটিমন জাতের আম চাষাবাদ বাড়ছে। রমজান উপলক্ষে নিরাপদ আম উৎপাদনে বাগান মালিকদের সব ধরণের সহায়তা করছে বলেও জানান এই কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।