বলিউড এক বিশাল কর্মজগৎ। চাকচিক্য, আভিজাত্য, যশ, খ্যাতির সঙ্গে বলিউডের অজানা কিছু কালো অন্ধকার দিক রয়ে গেছে, যা কখনো সামনে আসে না। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কিছু জিনিস রয়েছে, যা লোকলজ্জার ভয়ে আড়ালেই থেকে যায়। যার মধ্যে একটি হলো কাস্টিং কাউচ।
এর অর্থ হলো এমন একটি মানসিকতা, যেখানে পরিচালক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারা অভিনেতা বা অভিনেত্রীর অযাচিত সুবিধা নেন। তরুণদের যৌন সুবিধার বিনিময়ে চলচ্চিত্রে সুযোগ দেওয়া হয়। অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী এর মধ্য দিয়ে গেছেন এবং এখন তারা এটি সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেছেন, যা বলিউডের অন্ধকার দিকে কিছুটা আলো ফেলেছে। চলুন জেনে নিই এমন কিছু তারকার সম্পর্কে যারা কাজের বিনিময়ে বিছানায় যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন।
সুরভিন চাওলা : বলিউডে নিজের ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো করতে না পারলেও ‘হেট স্টোরি’ দিয়ে সাহসী স্টাইলে তিনি ঝড় তোলেন। তবে এই অভিনেত্রী দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে কাস্টিং কাউচের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে কথা বলেছিলেন। তাকে একজন পরিচালক কুপ্রস্তাব দেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর তিনি কখনোই হাল ছেড়ে দেননি এবং তাঁর কঠোর পরিশ্রম অব্যাহত রেখেছেন।
কাল্কি কোয়েচলিন : তিনিও এমন কয়েকজন অভিনেত্রীর একজন, যিনি কাস্টিং কাউচ সম্পর্কে কথা বলেছেন। তাকেও আপস করতে বলা হলে তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
আয়ুষ্মান খুরানা : বলিউডে আত্মপ্রকাশের আগে আয়ুষ্মান একজন জনপ্রিয় সঞ্চালক ছিলেন। তাঁর সংগ্রামের দিনগুলোতে তাকে কিছু কাস্টিং ডিরেক্টর দ্বারা যৌন সুবিধা প্রদান করতে বলা হয়েছিল, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। একজন টেলিভিশন পরিচালক তাকে কু-প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা তিনি গ্রহণ করেননি। কাস্টিং কাউচের বাস্তবতা নিয়ে কথাও বলেছিলেন তিনি।
কঙ্গনা রানাউত : কাস্টিং কাউচের শিকার হয়েছিলেন এই অভিনেত্রীও। তিনি বলেছিলেন, কাউকে সত্যিই বোবা হতে হবে এই ভেবে যে তারা বিছানায় যাওয়ার বিনিময়ে সিনেমায় একটি ভূমিকা পাবে। আমি কখনোই এত বোবা ছিলাম না, এমনকি ১৭ বছর বয়সে যখন আমি আমার কর্মজীবন শুরু করি তখনো নয়। মানুষের উচিত তাদের সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করা। এসব বিষয়ে কোনো ছাড় নয়।
রণবীর সিং : বিষয়টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ তারকা রণবীর সিং বলেন, ‘‘হ্যাঁ, ইন্ডাস্ট্রিতে কাস্টিং কাউচের অস্তিত্ব আছে। আমি আমার সংগ্রামের দিনগুলোতে এটি অনুভব করেছি। তবে এটি নির্ভর করে আপনি কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন তার ওপর। আমি বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করাটা বেছে নিয়েছি। ’’
রাধিকা আপ্তে : ‘পার্চড’ অভিনেত্রী রাধিকা আপ্তে রাতযাপনের শর্তে একটি বলিউড সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করেছেন। একটি অনলাইন পোর্টালের সঙ্গে কথোপকথনে রাধিকা প্রকাশ করেছেন যে তিনি কাস্টিং কাউচের অনেক উদাহরণ জানেন এবং এটির মধ্য দিয়ে যাওয়া অনেক লোককেও জানেন।
ঊষা যাদব : জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী ঊষা যাদব, ‘ট্র্যাফিক সিগন্যাল’, ‘ধাগ’, ‘দ্য মুম্বাই ট্রিলজি’ এবং ‘বীরাপ্পান’ চলচ্চিত্রের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তবে এই অভিনেত্রীও একটি উদাহরণ দিয়েছেন কাস্টিং কাউচ সম্পর্কে। কারণ তাকে সরাসরি একজন ব্যক্তির সঙ্গে সেক্স করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যার বিনিময়ে তাকে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হবে। সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
সাইয়ামি খের : সাইয়ামি, যিনি হর্ষবর্ধন কাপুরের বিপরীতে রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার ‘মির্জিয়া’ সিনেমা দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি দুঃখিত বোধ করেন যে মহিলারা প্রায়ই শিল্পে শোষিত হয়। তিনি প্রকাশ করেছেন যে তিনিও একই রকম পরিস্থিতিতে পড়েছেন। এক নারী প্রযোজক তাকে এই প্রস্তাব দেন। তবে সাইয়ামি ভদ্রমহিলাকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে তাকে যেন আর ফোন না করেন।
এ ছাড়া বহু সময় বহু তারকা বলিউডে এই অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। নামকরা অনেক তারকা প্রায়ই তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন, আবার অনেকে অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত করেছেন তাদের এই কালো অধ্যায়টি।
সূত্র : ইন্টারনেট।