বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। এদিকে বাজারে বাড়তি দামের কারণে খুশি পেঁয়াজ চাষিরা। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ নিয়ে দুঃচিন্তায় এ জেলার চাষিরা। প্রতিবছরই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে গিয়ে গড়ে ৩০ ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয় বলে দাবি চাষিদের। এজন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণে সরকারি সহযোগিতা চান তারা।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারি জেলা রাজবাড়ীতে দুই ধরণের পেঁয়াজের আবাদ হয়। মুড়ি পেঁয়াজ আর হালি পেঁয়াজ। এরই মধ্যে মুড়ি পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে উত্তোলণ করে বিক্রি হয়ে গেছে। মুড়ি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। হালি পেঁয়াজ কৃষকরা সংরক্ষণ করে। তবে চাষিরা মাচা পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে থাকে। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ছয় থেকে সাত মাস সংরক্ষণ করা যায়।
পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় ভালো আবহাওয়া প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে বা পেঁয়াজের জমি ভেজা থাকলে সেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। কিছু দিন ধরে মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি আর আকাশে মেঘ থাকার কারণে মাঠ থেকে দ্রুত পেঁয়াজ উত্তোলন করছে চাষিরা। এজন্য অনেকে একটু অপরিপক্কও পেঁয়াজও তুলে ফেলছে।
পেঁয়াজ চাষিরা আরও জানান, ভালো মানের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয় বাড়তি দামের আশায়। সংরক্ষণের জন্য কৃষক বাঁশের মাচা বানিয়ে টিনের ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে। তবে অধিক তাপমাত্রা, বৃষ্টির পানিসহ নানা কারণে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে গিয়ে নষ্ট হয় অনেক পেঁয়াজ।
চাষিদের দাবি, সংরক্ষণে পেঁয়াজ ভালো থাকলেও ছয় মাস ঘরে রাখলে প্রতিমণে ১০ কেজি কমে যায়। আর পচন দেখা দিলে অনেক কমে যায়। অনেক সময় প্রতিমণে ২০ কেজিও নষ্ট হয়। কৃষকদের দাবি, পেঁয়াজ সংরক্ষণে আধুনিক সুযোগ সুবিধা তৈরি হলে দেশে পেঁয়াজের এমন সংকটের সৃষ্টি হত না।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার মুলঘর ইউনিয়নের কৃষক অমল দাস বলেন, আমি ১২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। আবহাওয়ার অবস্থা ভালো না থাকায় সব পেঁয়াজ দ্রুত উত্তোলন করছি। আরও ১০ দিন ক্ষেতে থাকলে ভালো হত। কিন্তু এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা নিয়ে চিন্তাই আছি। কারণ পেঁয়াজ কম বাতি হলে সেটি সংরক্ষণ করলে পঁচে যায়। গত বছরও আমার অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছিল।’
একই গ্রামের কৃষক মিন্টু শিকদার বলেন, আমরা পেঁয়াজ রোদে ভালো করে শুকিয়ে তারপর মাচায় তুলি। তিন থেকে চার মাস ভালো থাকে। কিন্তু ছয়মাস রাখলে ৪০ কেজি তখন ৩০ কেজি হয়। আর যদি কোন কারণে পচন দেখা দেয় তখন কি পরিমান নষ্ট হয় তার কোন হিসাব নেই।
একই গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান মৃধা বলেন, আমার ১৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রয়েছে। এখন দোকানের হালখাতা ও শ্রমিকের মজুরি দেবার জন্য কিছু পেঁয়াজ বিক্রি করে বাকি পেঁয়াজ রেখে দিব। আমরা নিজেদের মত করে রাখি। কোন বছর ভালো থাকে কোন বছর নষ্ট হয়। পেঁয়াজ রাখার জন্য কোন আধুনিক পদ্ধতি থাকলে ভালো হত। আমাদের এই পদ্ধতিতে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এটা দেশের ক্ষতি। আমাদেরও ক্ষতি।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা নিয়ে একটু সমস্যা হবে। আবহাওয়া খারাপ দেখে অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলছে অনেক কৃষক। এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে ভালো থাকবে না। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পরিপক্ক পেয়াজ রোদে ভালো করে শুকিয়ে তারপর মাচায় তুলতে হবে। তাহলে সেই পেঁয়াজ ভালো থাকবে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি বিপনন বিভাগ বালিয়াকান্দি জেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘর বানিয়েছে। সেই ঘরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যাবে। কৃষক সেই ঘরে দেখে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ঘর বানাতে পারে।’
রাজবাড়ীতে এ বছর মুড়ি এবং হালি পেঁয়াজ মিলে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মুড়ি পেঁয়াজ ৪ হাজার হেক্টর আর হালি পেঁয়াজ ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। চলতি বছর রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.