বীজতলা তৈরির মাধ্যমে জমি প্রস্তুতি, তারপর জমিতে চারা রোপণ ও পরিচর্যা। শীতকালে যে আবাদের শুরু, শেষ হচ্ছে তীব্র তাপদাহে। মাঝখানে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা। ক্ষেতে ক্ষেতে এখন বোরো ধানের সোনালি রঙ। চলছে এখন ধান ঘরে তোলার উৎসব। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমিতে ফলানো সোনা ধান গোলায় তুলছেন কৃষক, তাদের মুখে তাই উজ্জ্বল হাসি। তবে শঙ্কাও রয়েছে ঝড় ও শিলা বৃষ্টির। ধান ৮০ শতাংশ পাক ধরলেই তা কর্তনের পরামর্শ রয়েছে কৃষি বিভাগের। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক সঙ্কটে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে গেরস্তকে। সবকিছু ছাপিয়ে সোনালি ধান ঘরে তোলার প্রতিযোগিতা চলছে সারা দেশে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তথ্য মতে, হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় প্রায় শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে আগাম ধান পাকায় হাওরে শ্রমিক সঙ্কট পড়েনি। সেখানে আবার পর্যাপ্ত হারভেস্টার মেশিন থাকায় ধান কাটার কাজ এগিয়ে দিয়েছে। যেটা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নেই। ধান কাটায় শ্রমিকই ভরসা বেশির ভাগ চাষির। ডিএইর তথ্য মতে, সারা দেশে গড়ে প্রায় ৬২ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকি ধান ঘরে তোলার জন্য চলছে তোড়জোড়। মাথার ওপর ঝড়-শিলা বৃষ্টির আশঙ্কা তাড়া করছে কৃষককে। তাই ধান গোলায় ভরার তাড়া সবার।
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় এবার ৩০ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান ৮৯ সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এর পরেই রয়েছে বিআর ২৯ ধান, প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী।
ডিএই সূত্রে জানা যায়, এবার ৫০ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। আবাদ হয়েছে ৫০ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টরের বেশি। এর মধ্যে ৩৫ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে উফশী জাতের ধান, ১৪ লাখ হেক্টরের বেশি হাইব্রিড এবং ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুনামগঞ্জ জেলা উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম নয়া দিগন্তকে জানান, হাওর ও নন হাওর মিলিয়ে ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টরের বেশি। এর মধ্যে হাওরভুক্ত প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমির ধান গত ৫ মে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। নন হাওর প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর। তিনি জানান, এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ১৩ হাজার ১৩৮ মেট্রিক টন চাল। আশা করছি যে, এটা ৯ লাখ ১৮ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে।
এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এক সময় বিআর ২৮ ও ২৯ ধান জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হতো। রোগবালাই আক্রমণ করে তাই আমরা কৃষককে এটির পরিবর্তে অন্য ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করি। এতে আমরা সফল হয়েছি। এবার জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে ব্রি ধান ৮৯। মোট ৩৪ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বিআর ২৯ ধান ৩১ হাজার ও ২৮ ১৮ হাজার হেক্টর (দুটি মোট ৪৯ হাজার হেক্টর), ব্রি ৮৮ ধান ২১ হাজার ৮০০ হেক্টর, ব্রি ৯২ ধান ২২ হাজার ৭৬৩ হেক্টর অন্যতম। মোট আবাদের প্রায় ৩০ শতাংশ হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো: তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি বলেন, আমাদের আশঙ্কা ছিল হাওরের ধান নিয়ে, সেটা প্রায় শতভাগ কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। ফলন খুবই ভালো। কৃষক খুবই খুশি। সারা দেশে গড়ে প্রায় ৬২ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। ধান ৮০ শতাংশ পাক ধরলেই কৃষককে তা কেটে ফেলার পরামর্শ রয়েছে আমাদের। সেটা বহাল রয়েছে। তিনি বলেন, ঝড় বা শিলাবৃষ্টি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই বোরোতে। তবে, সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হাওর বাদে সারা দেশের বোরো ধান কাটার গড় হার ৪০ শতাংশের মতো।
প্রতি বছরের মতো এবারো বিআর ২৮ ও ২৯ ধান বেশি চাষ হয়েছে বলে জানান তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি। তবে, গতবারের চেয়ে এবার কমেছে। কিন্তু কী পরিমাণ কমেছে বা আবাদ হয়েছে তার পরিসংখ্যান দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা কারণে কৃষককে বিআর ২৮ ও ২৯ জাতের ধান চাষে নিরুৎসাহিত করে আসছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বিকল্প জাত হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১০০, বিনা-২৫-সহ ব্রি ৮৯, ৯২, ৯৭, ৯৯ ইত্যাদি আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ বোরো মৌসুমে ৩৫ লাখ হেক্টর জমিতে উফশী ধানের আবাদ হয়; এর মধ্যে ৫০ ভাগের বেশি তথা প্রায় ১৮ লাখ হেক্টর জমিতে বিআর ধান ২৮ ও ২৯ এর চাষ করেন কৃষকে। অর্থাৎ নিরুৎসাহিত করার পরও বোরো ধানে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বিআর ২৮ ও ২৯ জাতের ধান।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.