ঢেঁড়শ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, তাছাড়া ভিটামিন -এসহ অন্যান্য উপাদানও রয়েছে। আমাদের দেশে যে কোনো সময় ঢেঁড়শ চাষ করা যায়। শহরে বসবাস করেও অনেকে বিভিন্ন সবজি চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইচ্ছে করলেই ছাদে কিংবা ব্যালকনিতে অল্প পরিসরে নানান রকমের সবজি চাষ করতে পারেন। চাইলে আপনি সহজ উপায়ে টবে ঢেঁড়শ চাষ করতে পারেন। শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সার, মাটি ভরে অনায়াসেই ঢেঁড়শ চাষ করা যায়।
গাছের বৃদ্ধি এবং ঢেঁড়শের ভালো ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫ থেকে ৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।
ঢেঁড়শের অনেক জাত রয়েছে। এর মধ্যে পুশা শাওনী, কাবুলি ডোয়ার্ফ, লক্ষ্ণৌ ডোয়ার্ফ, লং গ্রিন, লং হোয়াইট, পেন্টা গ্রনি-এসব বিদেশি জাত বেশ জনপ্রিয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত অর্থাৎ বছরের যে কোনো সময়ই ঢেঁড়শ গাছ লাগানো যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শীতের শেষভাগ থেকে বৈশাখ পর্যন্ত ঢেঁড়শ লাগানো যায়। এরপরও লাগানো যায় তবে নাবী ফসলে মোজাইক রোগ হয় বলে ফলন ভালো হয় না।
ঢেঁড়শের চারা রোপণকালীন সময় আঘাত সহ্য করতে পারে না বলে সরাসরি মূল টবে বুনতে হবে। ঢেঁড়শের জন্য মাঝারী ধরণের টব হলেই চলবে। প্রতি টবে ২ থেকে ৩টি বীজ বুনে দিতে হয়। চারা গজানোর পর একটি সবল চারা রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে হয়। খোসা শক্ত বলে ঢেঁড়শের বীজ দেরিতে গজায়। তাই বোনার আগে ২৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
ঢেঁড়শ গাছ পানি সহ্য করতে পারে না। গাছের গোড়ায় দাঁড়ানো পানি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটি টবে পানি যাতে না বেধে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ ১০ থেকে ১২ সে.মি. বড় হলে টবের কিনার ঘেঁষে ১ চা চামচ ইউরিয়া ও ১ চা চামচ মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
শুঁয়া পোকা কচি কাণ্ড ছিদ্র করে গাছের ক্ষতি করে। ভাইরাস (মোজাইক) রোগ ঢেঁড়শে প্রায়ই দেখা যায়। এ রোগে পাতা হলদে হয়ে কুঁচকে যায়। রোগাক্রা’ন্ত গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। শুঁয়া পোকার আ’ক্রমণ থেকে ঢেঁড়শ গাছকে বাঁচাতে হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মি. লি. ডায়াজিনন-৮০, নুভাক্রণ-৪০, একালাক্স-২৫ এর যে কোনোটি অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার সিমবুশ-১০ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ঢেঁড়শে বীজ বপনের দুই মাস পরেই ফল পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় ঢেঁড়শ তুলতে হয়। দেরি হলে ফল শক্ত হয়ে যায় ও সেটা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। ঘন ঘন ঢেঁড়শ তুললে গাছে বেশি পরিমাণে ঢেঁড়শ আসে। গাছের ঠিক মতো যত্ন নিলে এক একটি ঢেঁড়শ গাছ থেকে ফসল পাওয়া যায় অনেকদিন।