অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কতদিনে নির্বাচন হতে পারে- এটা এখনো কেউ বলেননি। আলাপ হলে বলবো। কতদিনে নির্বাচন করলে ভালো হবে, যেভাবে আপনারা বলবেন সেভাবে হবে। আপনারা বললে করে নির্বাচন দেবে। তবে সেটা ভালো হবে কি না, সেটা আপনারা চিন্তা করেন।
তিনি বলেন, যারা অপরাধী তাদের বিচার করতেই হবে। না হলে এটার থেকে মুক্তি পাবো না। কাজেই অপরাধীদের বিচার করবো।
শনিবার সকালে রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন তিনি। পরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রংপুরে এসেছি অনেকবার। বহুদিন থেকে আমি রংপুরের সঙ্গে সংযুক্ত। এই রকম ভারী মনে রংপুরে আসিনি কোনোদিন। রংপুরের দারিদ্র্য, দুরবস্থা, ক্রমাগতভাবে দেখে গেছি। আজকে যে কারণে আসলাম, রংপুরের একটি ছেলে আবু সাঈদ, সে সারা বাংলাদেশকে পাল্টে দিয়েছে। শুধু বলেছে, ‘আর না’। যত অত্যাচারই করো— আমি আছি। সে বুক পেতে দিয়েছে অত্যাচারকে নেহায়েত গ্রহণ করার জন্য। তার বুক চিরে গুলি চলে গেছে। তার আত্মত্যাগ সারা বাংলাদেশকে জাগিয়ে দিয়েছে। তার একটা ঘটনা, প্রতিবাদ…। শরীরটা ছাড়া কিছুই ছিল না তার। সেই শরীর দিয়েই প্রতিবাদ করেছে সে। আত্মাহুতি দিয়েছে সে।
তিনি বলেন, এই অত্যাচারীর ভূমিকায় আমরা সবাই। সেই ভূমিকাটা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা তার কারণেই আজকে দ্বিতীয় বিজয়ের কথা বলছি। যে কারণে আজকে রংপুরের দিকে সারা বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। সালাম দিচ্ছে। সারা পৃথিবী রংপুরকে সম্মান করছে।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা মহাকাব্য পড়ি। আমাদের আবু সাঈদ এই মহাকাব্যের নায়ক। সে নিজে রচনা করে দিয়ে গেছে। তার কারণে একটা পুরো জাতিকে দুঃস্বপ্ন থেকে আবার জাগিয়ে দিয়ে গেছে। বর্বরতা থেকে জাগিয়ে দিয়ে গেছে। আমরা একটা বর্বর জাতি হয়ে গেছি। সে সেটা দেখিয়ে গেল কত বর্বর আমরা হতে পারি। আমরা বর্বরতার চূড়ান্তে পৌঁছে গেছি। এই বর্বরতা থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তার উপায় জানতে রংপুরে এসেছি। আবু সাঈদের কাছে গেছি। তার কাছে মাফ চেয়েছি, যে তোমাকে এই বর্বরতা থেকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। তবে ভবিষ্যতে যাতে এটি আর না হয় সেটিই হলো আমাদের বিষয়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমেই আমরা এটা জানতে পেরেছি। আপনাদের মহান শক্তি। এই শক্তিটাকেই কাজে লাগিয়ে কীভাবে জাতিকে আবার একত্রিত করা যায়, এক পরিবার বানানো যায় সেই কাজ করতে হবে। আমরা মারার জন্য দেশ বানায়নি। গড়ার জন্য দেশ বানিয়েছি। আমরা একটা পরিবার। সবাই সবাইকে রক্ষা করবো, সবাই মিলে উপরে ওঠার চেষ্টা করবো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা অপরাধী তাদের বিচার আমাদের করতেই হবে। না হলে এটার থেকে আমরা মুক্তি পাবো না। কাজেই অপরাধীদের বিচার করবো। যেন নিরপরাধ কারো উপরে কোনো অপবাদ লাগিয়ে, তাকে আবার অত্যাচার করে যেন বর্বরতার দিকে ফিরে না যায়।
তিনি বলেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাতে করে আমরা একত্রিত হতে পারি। এখানে কেউ আমাদের বিদেশি আক্রমণকারী নেই। সব আমরা আমরাই। আমরা গলাগলি করে বাঁচতে চাই, মারামারি করে নয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই একই পরিবার। সে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যেই হোক। এখন আবার সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের খবর শুনছি। এটি যেন না হয়। বিভিন্ন ওসিলায় এসব অত্যাচার ঘটবে। এগুলো রুখে দিতে হবে, যা হয়ে গেছে সেটার থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনা অসীম। এই জাতির যে তরুণ সমাজ, তার যে সৃজনশীলতা, তাদের যে উদ্দম, অন্য জাতির তুলনায় অনেক বেশি। সহিংসতা বাদ দিলে এই জাতিকে আমরা বহু উপরে নিয়ে যেতে পারি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সংস্কার করতে হবে। বর্বরতাকে পরিষ্কার করতে হবে। এগুলো না করলে সেই বর্বরতার মধ্যেই আমাদের থেকে যেতে হবে। কাজেই এটা পরিষ্কার করতেই হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যেকটা জিনিস পচে গেছে, পুরো জিনসটাই…। এই পচা জায়গাটাকে আবার নতুন তরতাজা জাতি তৈরি করতে হবে। এবং আমরা পারি। শুধু আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে, করতে হবে। এজন্য কঠিন হতে হবে। সবাইকে এতে সমর্থন দিতে হবে।
এখন নিজেদের মধ্যে একতা হওয়াটাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, একতা হলে সবকিছু সম্ভব। পচা যন্ত্রটাকে ঠিক করার জন্য এটাই মুহূর্ত। এ সময় সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক দুর্নীতি আছে। যখন অ্যাকশন শুরু হবে সে সময় আপনারা সমর্থন করবেন।