“আমি তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা পরে কোনো বিবৃতি দেননি,” লিখেছেন জয়।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তার পদত্যাগের যে খবর একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা ‘বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
রোববার মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “সম্প্রতি একটি পত্রিকায় আমার মাকে উদ্ধৃত করে তার পদত্যাগের যে বিবৃতি ছাপা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা পরে কোনো বিবৃতি দেননি।”
ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট রোববার ওই প্রতিবেদনে লিখেছে, দেশে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেছেন, মানুষের মৃত্যু এবং সম্পদহানি ঠেকাতেই তিনি সরে গেছেন।
শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। আপনাদের বিজয়ে আমি (ক্ষমতায়) এসেছিলাম, আপনারা ছিলেন আমার শক্তি। আপনারা যখন আমাকে চাননি, আমি তখন নিজে থেকে সরে গেছি, পদত্যাগ করেছি।”
এর আগে শুক্রবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, “আমার মা কখনই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময়ই তিনি পাননি।”
তবে এর বিপরীত বক্তব্য এসেছে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছ থেকে।
শেখ হাসিনা ‘কাগজেকলমে পদত্যাগ’ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে রোববার এক ব্রিফিংয়ে তৌহিদ বলেন, “আমি যেটুকু জানি, সেটা আপনাকে বলছি। কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি যেটা জানতে পেরেছি, সেটা হল যে, তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে আছে।
“এটুকু তথ্য কনফার্ম করা হয়েছে। তারপরে বাকিটুকু আমি বলতে পারব না।”
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রায় তিনশ মানুষের প্রাণ যায়।
৫ অগাস্ট আন্দোলনারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর আসে। সেদিন বিকালে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের বলেন, পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
The recent resignation statement attributed to my mother published in a newspaper is completely false and fabricated. I have just confirmed with her that she did not make any statement either before or since leaving Dhaka
— Sajeeb Wazed (@sajeebwazed) August 11, 2024
প্রথমে হেলিকপ্টর ও পরে সামরিক বিমানে চড়ে আগরতলা হয়ে সেদিন রাতেই দিল্লি পৌঁছান বাংলাদেশের টানা ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী। এখনও তিনি সেখানেই আছেন।
প্রিন্ট লিখেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাঠানো বার্তায় শেখ হাসিনা এই পট পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেছেন, “সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
“সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
এ ধরনের বিদেশি শক্তির দ্বারা ‘ব্যবহৃত’ না হওয়ার জন্য নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও সতর্ক করা হয়েছে ওই বার্তায়।
শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হয়েছে, “লাশের মিছিল যাতে দেখতে না হয়, সেজন্য আমি পদত্যাগ করেছি। তোমাদের (শিক্ষার্থী) লাশের ওপর দিয়ে তারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। আমি তা হতে দিইনি।
“আমি দেশে থাকলে হয়ত আরও প্রাণহানি হত, আরও অনেক সম্পদহানি হত।”
প্রিন্ট লিখেছে, শেখ হাসিনা আগামী সপ্তাহে ভারতেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।