বস্তায় করে ঘুষ নিতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ দিতেন তিনি বস্তা ভর্তি টাকা ঘুষ নিয়ে। শুধু তার বিরুদ্ধেই নয়, এমন অভিযোগ উঠেছে তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধেও। এমন গুরুতর অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেন- মন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব (পিএস) ও অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু।
গতকাল দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। দুদক বলছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ দিতেন। আসাদুজ্জামান খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ঘুষ হিসেবে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এ টাকা আদায় করা হতো। এ জন্য তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।
এ সিন্ডিকেটের অন্য সদস্য ছিলেন যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন। টাকা আদায় বা উত্তোলনে মূল ভূমিকা পালন করতেন ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাস। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কামাল ও হারুন সিন্ডিকেট। একপর্যায়ে হারুন অর রশিদ অবসরে গেলেও এ মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ঝুঁকি এড়াতে টাকা পাঠানো হয়েছে দেশের বাইরে।
অভিযোগ রয়েছে, জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনিম্ন ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিত ওই চক্র। এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনো জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৩ কোটি টাকা নিত এই সিন্ডিকেট। দুদক সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর মাসখানেক আগে হারুন অর রশিদ বিশ্বাসের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন মোল্ল্যা নজরুল। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর হোটেল ওয়েস্টিনে হারুন অর রশিদের কাছে নগদ ২ কোটি টাকা দেন তিনি। এ সময় আগের চেকটি ফেরত নিয়ে মোল্ল্যা নজরুল ৩ কোটি টাকার একটি চেক দেন। পরে বাকি টাকাও দেওয়া হয়।
এসব টাকা বস্তায় ভরে পৌঁছে দেওয়া হতো আসাদুজ্জামান খানের ফার্মগেটের বাসায়। মন্ত্রীপুত্র জ্যোতি পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বদলি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। কামাল তাকে জানান- হারুন অর রশিদের সঙ্গে কথা বলতে। এ নিয়ে গত জুন মাসে বাসায় কলহ তৈরি হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে বাসায় ভাঙচুর করেন জ্যোতি। এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে গিয়ে প্রতি সংস্থা থেকে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা দিতে হতো আসাদুজ্জামান খানের দরবারে। ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরার একটি এনজিও এনওসি নিতে গেলে বিপত্তি শুরু হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে। তারপরও অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় মন্ত্রণালয়ে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
ফার্মগেট এলাকায় আসাদুজ্জামান খানের বাসার সামনে টাকার ব্যাগটি দেওয়া হয় তার পরিবারের এক সদস্যের কাছে। দুদক সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে কোনো সার্কুলার হলেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি তালিকা পাঠানো হতো। সে মোতাবেক তাদের নিয়োগ দিতে ফায়ার সার্ভিসকে বাধ্য করতেন সাবেক এই মন্ত্রী। গত বছরের ২ অক্টোবর ৫৩৫ জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে ছিলেন ৪৩৬ জন পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার ও ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই মন্ত্রীর দফতর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্দেশে সেই তালিকা মোতাবেক নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস। নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮-১২ লাখ টাকা নিত খান-হারুন সিন্ডিকেট। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে আসাদুজ্জামান খান।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.