আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতি কেজি ভোজ্যতেলের দাম ১২০ টাকা, চিনির দাম ৯০ টাকা ও আলুর দাম ২৫ টাকায় নামিয়ে আনার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সঙ্গে দুর্নীতি, দখলদারত্ব, সিন্ডিকেট ও স্বৈরাচারী রোধে একটি ট্রুথ কমিশন গঠনেরও দাবি জানিয়েছে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে ভোজ্যতেল, চিনি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, শিল্প, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. বিন ইয়ামিন মোল্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আজকে আমরা একটা কথা জানাতে চাই, আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিকেজি ভোজ্যতেলের দাম ১২০ টাকা, চিনি ৯০ টাকা, আলুর দাম প্রতি কেজি ২৫ টাকায় নামিয়ে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি যত প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরসহ বেসরকারি যত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরও এই আল্টিমেটাম দিচ্ছি। আপনারা এক সপ্তাহের মধ্যে কীভাবে এই দাম নির্ধারণ করবেন, সেটা আপনাদের দায়িত্ব। ছাত্র ও জনতার পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে এ দামের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে যারা দুর্নীতি করেছে এবং চরমভাবে যারা এই স্বৈরাচারী সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছে তাদের আইনিভাবে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি৷ একই সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি একটি ট্রুথ কমিশন গঠন করার জন্য। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ ন্যায্যতা পায়। এছাড়া যারা সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, আইনজীবী যে যে পেশাতেই থাকুক না কেন, তারা যাতে দেশের জন্য কাজ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করবেন।
ব্যবসায়ী বিভিন্ন সংগঠনকে উদ্দেশ্য করে ইয়ামিন মোল্লা বলেন, এত দিন বাংলাদেশে যেভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিগত সরকারের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, মানুষকে শোষণ করা হয়েছে। আমরা সেই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানাব আপনারা জনবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করার যে মূল্যবোধ, সেটিকে ধারণ করে ব্যবসা করবেন। অতি মুনাফা পরিহার করবেন। দেশের মানুষ যেন চারটা ডাল, ভাত ও ডিম খেতে পারে সে ব্যবস্থা করবেন। কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আপনারা মানবিক হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবেন বলে আমরা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআইসহ দেশের সব ব্যবসায়ী সংগঠনে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার কথা, এতদিন সেটা হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের কমিটি ভেঙে দিয়ে বা বিলুপ্ত করে নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে এসব স্থানে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ছিল, শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল তাদের পরিহার করতে হবে।
ইয়ামিন বলেন বলেন, ছাত্র-জনতা বন্ধুদের কাছে আহ্বান জানাব, আপনারা সারা দেশে সুশৃঙ্খলভাবে গণঅভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সাজাতে কাজ করছেন, আপনারা শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। পাড়া-মহল্লায় যেভাবে বাজার মনিটরিং করছেন, প্রত্যেকটি জায়গায় চাঁদাবাজি রোধ, দুর্নীতি প্রতিরোধ করছেন, দখলদারকে হটিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন, এজন্য আপনাদের সাধুবাদ জানাই। এ কাজগুলো চলমান রাখবেন। অবশ্যই আপনারা সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। সরকারি বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করার জন্য ও সহযোগিতা করবেন।