কথায় বলে, ‘কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ।’ কথাটি যেন শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকা শিল্পীর অস্তিত্বের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। এতদিন সরকারপন্থিরা মনে করত তারা ২০৪২ সাল পর্যন্ত বা কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। কেউ তাদের হটাতে পারবে না। তাই তারা নিশ্চিন্তে নিজেদের কৃতকর্ম সারছিল।
যেই দেখল তাদের নেত্রী আয়রন লেডি শেখ হাসিনাই এক কাপড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, সেই থেকেই তারা পলকা অনাথ হয়ে গেল। ক্যারিয়ার নিয়ে দেখছে ধুধু মরীচিকা। এরকম তো আগের সরকার বিএনপি’র সমর্থক শিল্পীদেরও হয়েছিল। কিন্তু তারা তো বিশ্বের কুখ্যাত কারাগার গুয়ানতানামো বে’র আরেক কুখ্যাত ‘আয়না ঘর’ বানায়নি।
তারপরও তাদের নামের সঙ্গে বিএনপি ট্যাগ লাগাতেই দীর্ঘ ১৬ বছর শোবিজের বাইরেই থাকতে হয়েছে বলতে গেলে। একজন শিল্পীর ক্যারিয়ারে যদি ১৬টি বছর নাই হয়ে যায়, তাহলে তার আর থাকে কী?
ঠিক তেমনি সময়টা একটা ভালো যাচ্ছে না অভিনেত্রী সোহানা সাবার। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে আওয়ামীপন্থি তারকারা এখন দলটির সরকারের কুখ্যাত কারাগার ‘আয়না ঘরে’ বীভৎস খুন ও গুম নিয়ে রোমকূপ শিহরণ দিয়ে যাওয়া গল্পের কারণে জনগণের খুবই ঘৃণার মানুষ।
তাই দিন যাচ্ছে সোহানা সাবারও সমালোচনায়। সম্প্রতি একটি ঘটনা তাকে সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত শোবিজ তারকাদের ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁসে উত্তাল নেটদুনিয়া। সেই গ্রুপের অত্যন্ত সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ যেন একাত্তরের আলবদরদের কুখ্যাত গ্রুপ। গোপন সেই গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁসের পর তিনি সবার কটাক্ষের পাত্র হয়েছেন।
তেমনি একজন ছোট পর্দার অভিনেত্রী সোহানা সাবাকে নিয়ে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গণমাধ্যমে ‘সোহানা সাবার দেহব্যবসার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এতে বেশ মেজাজ বিগড়িয়েছেন অভিনেত্রীর। এই সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে বলে দাবি সোহানার। কিন্তু এমন মিথ্যা রটনা আরও কত ঘটবে সামনে তা কেই বা জানে।
ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়ে ওই সংবাদের বিষয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন সোহানা সাবা। পোস্টে তিনি লিখেছেন, দেশের একটি গণমাধ্যমের অনলাইন আমার বিরুদ্ধে ৬ সেপ্টেম্বর একটি ইউটিউব এবং অনলাইন নিউজ করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে, যাতে আমার সুনাম নষ্ট হয়। সুনাম শুধু নষ্টই হয়নি, ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে। অথচ এই সাবা ক্যারিয়ারে কত স্বপ্নই না দেখতেন।
অভিনেত্রী সোহানা সাবা এ বছর ক্যারিয়ারের দুই দশক পূর্ণ করলেন। ২০০৪ সালে প্রয়াত অভিনেত্রী ও নির্মাতা কবরীর ‘আয়না’ সিনেমা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন সোহানা সাবা। সাফল্যের ২০ বছর পূরণ করলেন অভিনেত্রী।
সম্প্রতি ক্যারিয়ারের দুই দশক পূরণে উপলক্ষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন সোহানা সাবা। সেখানেই নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রী বলেন, ‘মানুষের তো কত ইচ্ছাই থাকে। অভিনেত্রী হিসেবে আমারও তো স্বপ্ন আছে জেমস ক্যামেরনের সঙ্গে কাজ করার। শখ, ইচ্ছা ও স্বপ্ন না থাকলে মানুষের জীবনের সমাপ্তি হয়ে যায়।’
তিনি আরও লিখেছেন, ২০ বছর ধরে আমি মিডিয়ায় কাজ করছি এবং সচেতনভাবে আমি আমার কাজের বাইরে কোনো বিতর্ক বা আলোচনায় থাকতে চাই না। এ বছরের শুরুতে একটি প্রতারণামূলক দল আমার নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিল। আমি তখনই একটি জিডি করি, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ কেউ আর করার সাহস না পায়। সেখান থেকে এক অপরিচিত সাংবাদিক এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে এবং আমাকে ফোন করে কথা বলে। এখন দেখছি, সে আমার বিনা অনুমতিতে সেই কথোপকথনটি রেকর্ড করেছে, যা সম্পূর্ণ আইনের বাইরে। সাবা লিখেছেন, ‘একটি অনলাইন আমার বিরুদ্ধে (ইউটিউব এবং অনলাইন নিউজ) নিউজ করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে, যাতে আমার সুনাম নষ্ট হয়। গত ২০ বছর ধরে আমি মিডিয়াতে কাজ করছি এবং সচেতনভাবে আমি আমার কাজের বাইরে কোনো বিতর্ক বা আলোচনায় থাকতে চাই না।’
সম্মানহানির চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে অভিনেত্রী বলেন, একজন নারী হিসেবে আমি সে সময়ে আমার সম্মান বাঁচাতে যে কাজটি করেছি, সেটি এই অসময়ে এসে আমার বিরুদ্ধেই বানোয়াট নিউজ করে আমার রেপুটেশন নষ্ট করার চেষ্টা করেছে একটি বিকৃত হেডলাইনের মাধ্যমে। আমি তাদের শক্তভাবে বলতে চাই, আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে প্রত্যেকটি নিউজ ডিলিট করবেন। না হলে আমি এই প্রমাণ নিয়ে আইনানুগ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘোরবিরোধী ‘আলো আসবেই’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য ছিলেন সোহানা। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর ‘গরম জল’ মারতে চাওয়া ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি ছাড়াও ছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ও চিত্রনায়ক রিয়াজ, সোহানা সাবা, জ্যোতিকা জ্যোতি, অরুণা বিশ্বাস, সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভীন সুইটি, আশনা হাবীব ভাবনা, শামীমা তুষ্টি, জামশেদ শামীম, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, সাজু খাদেম, হৃদি হক, ফজলুর রহমান বাবু, দীপান্বিতা মার্টিন, সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, লিয়াকত আলী লাকী, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, রওনক হাসান, আহসানুল হক মিনু, গুলজার, নির্মাতা মিলন ভট্টাচার্য, এস এ হক অলীকসহ অনেকে। দুই দশকের ক্যারিয়ারে টিভি অঙ্গনে অসংখ্য নাটকে কাজ করেছেন সোহানা সাবা। চলচ্চিত্র অঙ্গনেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। ‘আয়না’, ‘খেলাঘর’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘প্রিয়তমেষু’, ‘বৃহন্নলা’ ও ‘ষড়রিপু’ সিনেমায় কাজ করে রেখেছেন নিজের প্রতিভার ছাপ।