গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। অসংখ্য নেতাকর্মী সরকার পতনের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আগেই গোপনে দেশ ছেড়ে যান। আত্মগোপনে চলে যান অসংখ্য নেতাকর্মী। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে ধরা পড়েছেন।
তবে সরকার পতনের আগের দিন অর্থাৎ ৪ আগস্ট থেকে কোথাও দেখা মিলছে না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের।
ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে কেউ কেউ বলছিল দেশত্যাগ করেছেন আবার কেউ কেউ বলছিল তিনি দেশেই আছেন। তবে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, ওবায়দুল কাদের দেশ ছেড়েছেন। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি যশোর সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে ভারতে গেছেন।
সেখান থেকে তার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের যেসব নেতা পালিয়ে ভারতে যান, তাদের মধ্যে কয়েকজন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ওবায়দুল কাদের ভারতে পৌঁছেছেন বলে তারা শুনেছেন। তবে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি বা টেলিফোনেও কথা হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাসপোর্ট-ভিসা নেই।
তাই তার বৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাদের দাবি, অবৈধভাবে যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গেছেন কাদের। জানা যায়, ওবায়দুল কাদের আগে আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে রাজধানীর গুলশান থেকে যশোরের সীমান্তবর্তী এলাকায় যান। সেখানে প্রভাবশালী এক সরকারি কর্মকর্তার নিকটাত্মীয়ের শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান নিয়ে তিনি ভারতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। এর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকার গুলশানে একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।
সেখানে আগে থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। পরে গত ২৪ আগস্ট পালাতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তে মারা যান পান্না। তবে প্রকৃতপক্ষে ওবায়দুল কাদের বর্তমানে কোথায় আত্মগোপনে আছেন, সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানাতে পারছেন না কেউ।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বেশ সক্রিয় থাকতে দেখা যেত ওবায়দুল কাদেরকে। নিয়মিত তিনি তার ভেরিফায়েড পেজ থেকে অসংখ্য ছবি পোস্ট করতেন। তবে গত জুলাই মাসের ৫ তারিখের পর তার পেজ থেকে আর কোনো পোস্ট করা হয়নি।
ভারতে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, জটিলতা এড়াতে ওবায়দুল কাদের দিল্লিতে থাকতে পারেন। কেননা আত্মগোপনে থাকা বেশির ভাগ নেতাই তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা কলকাতায় অবস্থান করছেন। এই নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য ওবায়দুল কাদেরকেই দুষছেন। এ জন্যই কলকাতায় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে নেতাদের দেখা হলে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান পলাতক নেতারা। অবশ্য কেউ কেউ এখনো বলছেন, কয়েক দফা সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি এখনো সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের খোঁজ দিতে পারলে সাংবাদিকদের প্রাইজ দেওয়ার ‘ঘোষণা’ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহীর বিজিবি সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় ব্রিফিংকালে এক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের কোথায়- প্রশ্ন করলে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদেরের বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনো সংবাদ নাই। কিন্তু আপনারা তো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন, আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা যদি আমাকে এ রকম একটা খবর (ওবায়দুল কাদের কোথায় আছেন) দিতে পারেন, আমি আপনাদের একটা প্রাইজ দিয়ে দেব। আপনারা আমাদের কিন্তু অনেক সংবাদ দিতে পারেন। গত ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট- এই সময়ে কোনো সরকার ছিল না। এই সময়ে কিন্তু বেশির ভাগ লোক (আওয়ামী লীগের) চলে গেছে।’
গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশের পরই ওবায়দুল কাদেরের অবস্থানের বিষয়ে তথ্য চাইলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.