আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) একটি টুইট করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় পোস্ট করা ওই টুইটটিতে হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব দীপাবলির শুভেচ্ছাও জানান তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সম্পর্কে ভাটা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যেখানে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে লড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এখন প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট বাংলাদেশকে আসলে কী বার্তা দিচ্ছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইট শুরু করেছেন এভাবে- বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর’ সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন। এসবের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ ‘বিশৃঙ্খল’ অবস্থার মাঝে রয়েছে।
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য দেশের অনেক বিশ্লেষক। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর বাংলাদেশে যে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে সেটিও অস্বীকার করছেন না তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বিষয়ক সিনিয়র কনসালট্যান্ট টম কিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, তবে এগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।’
ট্রাম্প বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কতটা অবগত, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের কিছু ডানপন্থী মিডিয়া ও রাজনীতিবিদ এই ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করেছে। তাই এটি রাজনৈতিক চাল হতে পারে। অথবা তিনি ভুল তথ্য পেয়েছেন ও তা বিশ্বাস করেছেন।
’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফিড করা হয়েছে’। অর্থাৎ তাকে এটি বোঝানো হয়েছে। নয়তো তার এই ধরনের কথা বলার কথা না। কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়ে যেসব শব্দ ব্যবহার করেছেন, এইগুলো খুবই শক্ত শব্দ।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ব্যাপারে ভারতের গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
দিল্লির নিকটবর্তী ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত জানান, ভারতীয় গণমাধ্যমে এই ঘটনাগুলো অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার হয়েছে। তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা যে ঘটেছিল সেটিও মনে করিয়ে দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতীয় গণমাধ্যম ছোট ঘটনাকে বড় করে বলে আসছে যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে।’
চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ধর্মকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়, ট্রাম্পের টুইট তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।’
তিনি এ-ও বলেন, ‘হিন্দু ধর্মাবলম্বী, প্রধানত ভারতীয়দের ভোট নিশ্চিত করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য।’
টুইটে সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে কথা বলার পরই তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রসঙ্গ টেনে আনেন ট্রাম্প। লিখেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে কখনোই এমনটি ঘটত না। কমলা হ্যারিস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমেরিকা ও সারা বিশ্বের হিন্দুদের উপেক্ষা করেছেন।
তিনি আমেরিকার হিন্দুদেরকে চরমপন্থী বামদের ধর্মবিরোধী এজেন্ডা থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টুইটে বলেন, ‘আমরা তোমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়ব। আমার প্রশাসনের অধীনে আমরা আমাদের মহান অংশীদার ভারত এবং আমার মিত্র প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সম্পর্ক আরো মজবুত করব।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরের মতে, সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে বিশ্বের কাছে যে ন্যারেটিভটা তৈরি হয়েছে, তা আমাদের জন্য চিন্তার কারণ। আমরা মার্কিন নির্বাচনের রাজনীতির মাঝে ঢুকে গেলাম।
তবে অধ্যাপক রীয়াজ মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় বাংলাদেশের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাপের মুখে ‘অবশ্যই পড়বে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অবস্থান নেই। ট্রাম্প এখন প্রার্থী। তার এই অবস্থান রাজনৈতিক কারণে। এটা না বোঝার কারণ নাই। তিনি এর বাইরে খুব বেশিদূর যাবে বলে মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘তার একটি টুইট বড় কিছু পরিবর্তন করে দেবে না। তিনি যদি জিতে যান, সে ক্ষেত্রে সেই প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতি কী হবে, তা আমরা দেখতে পারব। সামগ্রিকভাবে ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান আমরা জানি। তিনি এক ধরনের রক্ষণশীল নীতি অনুসরণ করে চলেন। তার বাইরের পৃথিবীর ব্যাপারে কতটা আগ্রহ থাকবে? এই মুহূর্তে ভোটের কারণে তিনি করছেন। তাই উপসংহারে পৌঁছানোর কারণ নেই।’
রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির ও অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, ভারতীয় গণমাধ্যম বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের বিষয়ে যা প্রতিষ্ঠা করেছে, বাংলাদেশের উচিত সেটির যথাযথ জবাব দেওয়া।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.