দেশের যে কোনো উন্নয়নে প্রয়োজন অর্থের। দেশের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকার যখন বিদেশ থেকে লোন নেয় তখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- সরকারের কাছে তো টাকা ছাপার ক্ষমতা রয়েছে। তাহলে সরকার কেন ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না? অনেকে এভাবেও ভাবতে পারেন, সরকার তো চাইলেই টাকা বানিয়ে সেই টাকায় যে কোনো সংকট মোকাবিলা করতে পারে।
আসলে ব্যাপারটি এমন নয়। ইচ্ছেমতো টাকা ছাপানো যায় না। প্রতিটি দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নানান হিসাব-নিকেশ করে নতুন টাকা ছাপে। অতিরিক্ত টাকা ছাপালে এক সময় তা নিজেদের দেশের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যে কোনো দেশের নতুন টাকা ছাপার দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লি. টাকা ছেপে থাকে। এজন্য অনেক বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। করতে হয় অনেক হিসাব। যেমন দেশের মোট সম্পত্তি, জনগণের সংখ্যা, মোট আয়, সর্বমোট চাহিদা ইত্যাদি।
ইচ্ছেমতো টাকা ছাপালে সঞ্চয়ের মান কমে যাবে। কেউ ব্যাংকে টাকা রাখলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফা পাওয়া যায়। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা ছাপা হলে আপনি যে মুনাফা পাবেন তা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারবেন না। টাকার মান কমে যাবে অর্থাৎ আপনি এক বছর আগে যে টাকা দিয়ে একটি জিনিস ক্রয় করতে পারতেন, নতুন নোট ছাপার ফলে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে আপনাকে সেই জিনিস কিনতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইবে না এবং এতে ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কেউ যদি ভেবে থাকেন অতিরিক্ত অর্থ ছেপে সরকার বিদেশীদের ঋণ পরিশোধ করতে পারে এটিও সঠিক নয়। নতুন অতিরিক্ত টাকা ছাপার ফলে কারেন্সি রেট কমে যাবে। ফলে আগের চেয়ে আরও বেশি টাকা দিতে হবে।
সম্পদের চেয়ে টাকার পরিমাণ বেশি থাকলে সে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়। মনে করুন, একটি দেশের মোট সম্পদ বলতে ১০টি আপেল রয়েছে, যার মূল্য ২০ টাকা। সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর ২০ টাকা ছাপে। প্রতিটি আপেলের দাম দুই টাকা। এবার যদি পরের বছর সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪০ টাকা ছাপে তাহলে কি সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাবে? তা কিন্তু নয়। আপেল কিন্তু ১০টিই থাকবে। মাঝখান থেকে তখন আপেলের দাম দুই টাকা থেকে চার টাকা হয়ে যাবে। এভাবে বেশি টাকা ছাপালে টাকার মান কমে যায় এবং দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় মুদ্রাস্ফীতি। অতিরিক্ত টাকা ছাপানো হলে মুদ্রাস্ফীতি হয়। এর ফলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে সরকার নানা দিকে বিবেচনা করে নতুন টাকার নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
অতিরিক্ত টাকা ছাপার কুফল আমরা দেখতে পাই জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে। ২০০৮ সালের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের মাসিক মুদ্রাস্ফীতির সর্বোচ্চ হার নেমেছিল প্রায় ৭৯,৬০,০০,০০,০০০ শতাংশ। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতির আগে জিম্বাবুয়েতে একটি চকলেটের দাম ১ টাকা ছিল। মুদ্রাস্ফীতির পরে সেই চকলেটের দাম হয়েছিল ৭৯,৬০,০০,০০,০০০ টাকা। দৈনিক হিসেবে এটি ছিল ৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি। অর্থাৎ আজকে যে দ্রব্য ১০০ টাকার কিনতে পারবেন আগামীকাল সেটা হবে ১৯৮ টাকা। এর ফলে দেখা যেত লোকে ঠেলাগাড়ি কিংবা বস্তায় করে টাকা নিয়ে বাজারে যাচ্ছে। তখন জিম্বাবুয়ের সরকারকে বড় অঙ্কের নোট তৈরী করতে হয়েছিল। যেমন ১০ হাজার টাকার নোট। এক লাখ, ১০ লাখ টাকার নোট ইত্যাদি।
ভেনিজুয়েলাতেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। সরকার খাদ্যদ্রব্যের দাম কমানোর ফলে সেখানে দোকান হতে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস শেষ হয়ে গিয়েছিল দ্রুত। কারণ সবার কাছে অতিরিক্ত টাকা ছিল। এমন উদাহরণ আরো দেওয়া যাবে।
১৯২০ সালে জার্মানিতে ঘটে যায় এক ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি। মানুষ ঠেলাগাড়ি ভরে টাকা আনতো বাজার করতে। টাকার চেয়ে সে সময় ঠেলাগাড়ির মূল্য বেশি ছিল। ফলে মানুষ টাকা রেখে ঠেলাগাড়ি চুরি করতো।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.