বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান মারা গেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। আনিসুর রহমানের বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। অসুস্থতার কারণে তিনি দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন।
ফেসবুকে এক পোস্টে রুহিন হোসেন প্রিন্স বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনিসুর রহমানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখেন, দেশ ও গণমানুষের প্রতি তার অবদান আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি। স্যারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
প্রসঙ্গত, ১৯৩৩ সালে ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আনিসুর রহমান। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী প্রথিতযশা এই অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যয়ন করেন। হল ছাত্র সংসদের ভিপিও ছিলেন আনিসুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ইসলামাবাদ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেছেন আনিসুর রহমান।
ষাটের দশকে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরতে যে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ কাজ করেন, তাদের একজন ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ঘোষণাপত্র তৈরিতেও আনিসুর রহমান অন্যদের সঙ্গে সহায়তা করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারে ছিলেন তিনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সময় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। পরে ভারতের ত্রিপুরায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ভূমিকা রাখেন।
স্বাধীনতার পর অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনে আনিসুর রহমান প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। অংশীদারি গবেষণা এবং আত্মনির্ভর অংশীদারি উন্নয়ন-দর্শন ও পদ্ধতিগত প্রশ্নে তার অবদান বিশ্বস্বীকৃত। শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক আনিসুর রহমান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীও ছিলেন। সম্পৃক্ত ছিলেন ছায়ানটের সঙ্গে। গবেষণার জন্য ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর অনেকটা অন্তরালেই ছিলেন।
আনিসুর রহমানের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- উন্নয়ন জিজ্ঞাসা, অপহৃত বাংলাদেশ, পিপলস্ সেলফ্ ডেভেলপমেন্ট, পার্টিসিপেশন অব দি রুরাল পুয়োর ইন ডেভেলপমেন্ট, মাই স্টোরি অব ১৯৭১, একুশে ও স্বাধীনতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সমাজবাস্তবতা, অসীমের স্পন্দ-রবীন্দ্রসংগীত বোধ ও সাধনা, যে আগুন জ্বলেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ইত্যাদি।