পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে মিলে বাণিজ্যিক জাহাজে কর্মরত নাবিক স্বামীকে হত্যা করে এক নারী। পরে সেই নাবিকের মরদেহের ১৫ টুকরো করে একটি ড্রামে ফেলে সিমেন্ট ঢেলে জমিয়ে ফেলা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মিরাটে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিরাটের বাসিন্দা সৌরভ রাজপুত। সম্প্রতি তাঁকে হত্যা করে তাঁর স্ত্রী মুসকান রাস্তোগী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক সাহিল শুক্লা। পরে লাশটি ১৫ টুকরে করে একটি ড্রামে ভরা হয় এবং পরে তা সিমেন্ট দিয়ে সিল করা হয়।
পুলিশের মতে, এই লোমহর্ষক অপরাধের পেছনের কারণ সৌরভের স্ত্রী মুসকান এবং তাঁর প্রেমিক সাহিল শুক্লার মধ্যকার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। পুলিশি তদন্তে প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা এবং নিষ্ঠুরতার এক মর্মান্তিক গল্প বেরিয়ে এসেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সৌরভ রাজপুত এবং মুসকান রাস্তোগী ২০১৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁরা প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন। স্ত্রীর সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর জন্য সৌরভ নাবিকের চাকরি ছেড়ে দেন। তবে, প্রেমের বিয়ে এবং চাকরি ছাড়ার আকস্মিক সিদ্ধান্ত তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভালোভাবে নেয়নি। এর ফলে বাড়িতে দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং সৌরভ আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে সৌরভ ও মুসকান আলাদা একটি ভাড়া বাড়িতে চলে যান। ২০১৯ সালে মুসকান ও সৌরভের একটি কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু এই আনন্দ ক্ষণস্থায়ী ছিল। সৌরভ জানতে পারেন, মুসকানের সঙ্গে তাঁর বন্ধু সাহিলের অবৈধ সম্পর্ক আছে। এর ফলে, দম্পতির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং এমনকি বিবাহবিচ্ছেদের কথাও বিবেচনা করেছিলেন তাঁরা। অবশেষে, সৌরভ মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন। তিনি পুনরায় নাবিকের কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০২৩ সালে, তিনি কাজের জন্য দেশ ত্যাগ করেন। সৌরভের মেয়ের বয়স ২৮ ফেব্রুয়ারি ৬ বছর পূর্ণ হয়। বাবা সৌরভ আদরের মেয়ের বিশেষ দিনে সঙ্গে থাকার জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন। তত দিনে, মুসকান ও সাহিল আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং সৌরভকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
পুলিশের কাছে দেওয়া তাদের জবানবন্দি অনুসারে, মুসকান ৪ মার্চ সৌরভের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে, মুসকান ও সাহিল ছুরি দিয়ে তাঁকে হত্যা করে। এরপর দেহ টুকরো টুকরো করে একটি ড্রামে ভরে ভেজা সিমেন্ট দিয়ে সিল করে দেয়। পরিকল্পনা ছিল সময়মতো দেহটি সরিয়ে ফেলার।
এলাকার লোকেরা সৌরভের কথা জিজ্ঞাসা করলে, মুসকান তাদের জানান—তিনি পাহাড়ে বেড়াতে গেছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এবং সন্দেহ এড়াতে, তিনি এবং সাহিল সৌরভের ফোন নিয়ে মানালি ভ্রমণ করেন এবং তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি আপলোড করতে শুরু করেন। কিন্তু সৌরভ কয়েক দিন ধরে পরিবারের সদস্যদের ফোন না ধরায় তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
সৌরভের পরিবার অভিযোগ দায়ের করার পর, পুলিশ মুসকান এবং সাহিলকে হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা ভেঙে পড়ে এবং লোমহর্ষক হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপর দেহটি কোথায় ছিল সে সম্পর্কে তাঁরা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে। পুলিশ ড্রামটি খুঁজে পেলেও হাতুড়ি-ছেনি ব্যবহার করে শক্ত সিমেন্ট ভাঙার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
সৌরভের দেহের টুকরোগুলোসহ ড্রামটি মর্গ-এ নিয়ে যাওয়া হয় এবং একটি ড্রিল মেশিন ব্যবহার করে সৌরভের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয় হত্যার ১৪ দিন পর।
মিরাট সিটি পুলিশের প্রধান আয়ুষ বিক্রম সিং বলেন, ‘সৌরভ রাজপুতের পরিবার কয়েক দিন ধরে তাঁকে দেখতে না পেয়ে অভিযোগ দায়ের করে। সন্দেহের বশে, আমরা তাঁর স্ত্রী মুসকান এবং প্রেমিক সাহিলকে হেফাজতে নেই। জিজ্ঞাসাবাদের সময়, তাঁরা জানায়—৪ মার্চ তাঁরা ছুরি দিয়ে সৌরভকে হত্যা করেছে। তারা দেহ টুকরো টুকরো করে একটি ড্রামে ভরে সিমেন্ট দিয়ে সিল করে দেয়।’
আয়ুষ বিক্রম সিং আরও বলেন, ‘পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। আমরা দুজনকে হেফাজতে নিয়েছি। তাদের আদালতে হাজির করা হবে।’
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.