ঝিনুক থেকে অনুপ্রেরণায় তৈরি আঠা, ভাঙা হাড় জোড়া লাগবে ৩ মিনিটে

মাত্র তিন মিনিটে ভাঙা হাড় জোড়া লাগানোর মতো এক চমকপ্রদ চিকিৎসা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দাবি করেছেন চীনা গবেষকরা। ‘বোন-০২’ নামের এই বিশেষ ধরনের হাড়ের আঠা শুধু হাড়ের ভাঙাই সারাবে না, ভাঙা অংশে যন্ত্রপাতি বসাতেও সহায়তা করবে।

চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের এক গবেষক দল বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) নতুন এই চিকিৎসা উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয়। নেতৃত্ব দেন স্যার রান রান শ’ হাসপাতালের সহযোগী প্রধান অর্থোপেডিক সার্জন লিন জিয়ানফেং। তিনি জানান, পানির নিচে সেতুর গায়ে শক্তভাবে লেগে থাকা ঝিনুক দেখে তার এই আঠা তৈরির অনুপ্রেরণা আসে।

গবেষকদের দাবি, এই আঠা রক্তক্ষরণ চলা অবস্থাতেও দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে ভাঙা হাড় সঠিকভাবে জোড়া দিতে সক্ষম। আরও বড় বিষয় হলো, হাড় সেরে ওঠার সময় আঠাটি স্বাভাবিকভাবে শরীরে শোষিত হয়ে যায়। ফলে পরবর্তীতে ধাতব ইমপ্লান্ট বা স্ক্রু অপসারণের জন্য আলাদা অস্ত্রোপচারের দরকার হয় না।

তিন মিনিটেই অস্ত্রোপচার

ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার দিক থেকে ‘বোন-০২’ সফল। প্রচলিত চিকিৎসায় হাড় জোড়ার জন্য বড় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়, যেখানে স্টিল প্লেট ও স্ক্রু ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই নতুন আঠা ব্যবহার করে তিন মিনিটের মধ্যেই ভাঙা হাড় জোড়া দেওয়া সম্ভব। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি জানায়, ইতোমধ্যেই ১৫০ জনের বেশি রোগীর ওপর সফলভাবে এর প্রয়োগ হয়েছে।

ধাতব ইমপ্লান্টের বিকল্প?

পরীক্ষায় দেখা গেছে, ‘বোন-০২’ আঠা দিয়ে জোড়া দেওয়া হাড়ের বন্ধনশক্তি সর্বোচ্চ ৪০০ পাউন্ডের বেশি। পাশাপাশি এর শেয়ার স্ট্রেন্থ প্রায় ০.৫ এমপিএ এবং কমপ্রেসিভ স্ট্রেন্থ ১০ এমপিএ’র কাছাকাছি। এসব ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভবিষ্যতে ধাতব ইমপ্লান্টের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে এই প্রযুক্তি। একই সঙ্গে ধাতব প্রতিস্থাপনের কারণে সংক্রমণ ও প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

পুরোনো প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাজারে হাড় জোড়ার জন্য নানা ধরনের সিমেন্ট (বোন সিমেন্ট) ও ফিলার রয়েছে। তবে এদের মধ্যে কোনোটি আঠার মতো কাজ করে না। হাড়ের প্রথম আঠা তৈরি হয়েছিল ১৯৪০-এর দশকে, যা জেলাটিন, ইপক্সি রেজিন ও অ্যাক্রিলেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু জৈব উপযোগিতা না থাকায় এগুলো দ্রুত বাতিল হয়ে যায়।

সূত্র: এনডিটিভি।