উঠানে ধান মেলে এক মুহূর্তের জন্য একটু অন্যদিকে সরলেই মুরগির পাল ধানের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ধানের আশপাশ থেকে মুরগিকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার জন্য একজনকে ঠায় বসে থেকে ধান পাহারা দিতে হয়। খাওয়ার চেয়েও বড় জ্বালা হলো, ধান ছিটিয়ে একশেষ করে মুরগিগুলো।
মুরগির সাথে ধানের সম্পর্ক আদিকালের। ধান দিয়েই মুরগিকে মানুষ গৃহপালিত পাখি হিসেবে পোষ মানিয়েছিল। নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বে বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্য মুরগি। মুরগির ঝোল তথা চিকেন স্যুপকে কখনো কখণো সবরোগের পথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো, মানুষ অন্যান্য পশুর তুলনায় মোটামুটি অনেক পরেই মুরগিকে পোষ মানাতে পেরেছে।
নতুন গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অভ এক্সেটার, ইউনিভার্সিটি অভ অক্সফোর্ড, ও কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। আগে বিশ্বাস করা হতো, মুরগিকে আদিম মানুষ পোষ মানিয়েছিল মোটামুটি ১০,০০০ বছর আগে। কিন্তু অ্যান্টিকুইটি নামক এক জার্নালে প্রকাশিত নতুন এ গবেষণার তথ্যমতে মানুষ মুরগির সাথে নিবিড় সম্পর্ক করতে পেরেছিল কেবল খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে।
পূর্ব ইউরেশিয়া ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় পাওয়া তথাকথিত সবচেয়ে প্রাচীন ২৩টি মুরগির ফসিলের কার্বন ডেটিং করার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকেরা। ফলাফলে দেখা যায়, ওই হাড়গুলোর বেশিরভাগই মোটামুটি নিকট অতীতের।
গবেষকদের একজন, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির ড. জুলিয়া বেস্ট বলেন, ‘এ প্রথমবারের মতো আদিম সমাজে মুরগির গুরুত্ব বুঝতে রেডিওকার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রান্তীয় জঙ্গলগুলোর স্থানীয় পাখি ছিল মুরগি। ইউরোপে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দের আগে মুরগির আগমনই ঘটেনি। এরপর ভূমধ্যসাগরে মুরগি পৌঁছানোর আরও ১০০০ বছর পরে স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, ও আইসল্যান্ডের শীতল ভূপ্রকৃতিতে খাপ খাইয়ে নেয় মুরগি।
গবেষকেরা তাদের পরীক্ষার জন্য বিশ্বের ৮৯টি দেশে পাওয়া মুরগির ৬০০টির বেশি অবশিষ্টাংশ মূল্যায়ন করেন। সেখান থেকে দেখা যায় সবচেয়ে পুরতান হাড়ের মুরগিটির অস্তিত্ব ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৬৫০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১২৫০ অব্দ পর্যন্ত।
গবেষণার তথ্যমতে, মুরগি আদিতে গাছে বাস করত। ধানের মৌসুমে মানুষ মুরগির সন্ধান পায়। ধানের লোভ দেখিয়ে গাছ থেকে মুরগিকে নামিয়ে আদিম মানুষেরা মুরগিকে পোষ মানিয়েছিল।
গৃহপালিত করার পর মুরগিকে প্রথমে এশিয়া পার করে সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে নেওয়া হয়। মূলত মুরগির পোষ মানানো ও এ জনপ্রিয় খাবারটিকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল আদিম মানুষের ধানচাষ।
তবে আজকের দুনিয়ায় খাবার হিসেবে মুরগি যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, প্রথমদিকে কিন্তু মুরগিকে খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। বরং তখন মুরগি ছিল বিনোদনের একটি উপাদান, মুরগিকে বিবেচনা করা হতো ‘এক্সোটিক’, বিরলজাতের অপরূপ সুন্দর একটি পাখি হিসেবে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, হারেটজ