শিকারকে বাগে আনতে শিকারী কত রকম কৌশলই না অবলম্বন করে। শিকারীর ফাঁদে পা দিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করছে পশু পাখি। ধরিত্রীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষ হলেও প্রাণীকুলের অন্যান্যদের বুদ্ধিমত্তা অবাক করবে আপনাকেও। ব্ল্যাক এগ্রেটস বা কালো সারস নামক এক শ্রেণির আফ্রিকান সারস পাখিও তেমনি এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছে মাছ শিকারের জন্য।
তারা নিজেদের ডানাকে ছাতার মতো মেলে ধরে। এর ফলে শুধু যে তাদের তীক্ষ্ণদৃষ্টিই ঢাকা পড়ে, তা নয়; নিরাপত্তার ধোঁকা দিয়ে মাছগুলোকে ডানার নিচে চলে আসতেও প্রলুব্ধ করে। কালো সারসদের ‘ক্যানোপি ফিডিং’ নামক এই শিকারি কৌশলকে মনে করা হয় প্রাণীজগতের সবচেয়ে গোপন কৌশলগুলোর অন্যতম।
লম্বা পদযুক্ত এই পাখি অগভীর পানিতে ধীরে ধীরে হেঁটে যায় এবং নিজের ডানা ছড়িয়ে ছাতার মতো করে ফেলে, যেন আলো প্রবেশ করতে না পারে। যদিও আফ্রিকান কালো সারসদের এই অদ্ভুত কৌশল ব্যবহারের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কৌশলটির মাধ্যমে পাখিটি নানা সুবিধা পেয়ে থাকে।
তবে সবচেয়ে পরিচিত কারণটি হলো, ছোট মাছেরা বড় শিকারিদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে চায়। ফলে তারা কালো সারসের ডানার নিচে এসে আশ্রয় নেয়। এতে উল্টো নিজের মৃত্যুর দিকেই ধাবিত হয়। ডানার ছায়ার কারণে এই পাখি ভালো করে মাছ লক্ষ্য করতে পারে এবং নিজেদের লম্বা চঞ্চুর সাহায্যে পানি থেকে শিকার তুলে নেয়।
সারস পাখিরা সাধারণত মাটির নিচের ছোট আকৃতির শিকারের দিকেই বেশি নজর দেয়। তাই এটা তাদের শিকারি কৌশলের একটি অংশ। তবে মজার ব্যাপার হলো, আফ্রিকান সারস পাখির পায়ের রঙ হলুদ হওয়ায় তা সহজেই শিকারকে তাদের লক্ষ্য থেকে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। অন্যান্য সারসের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটলেও আফ্রিকান কালো সারসদের এই ‘ক্যানোপি ফিডিং’ কৌশলই তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে শিকারের জন্য তারা অধিকাংশ সময় এই পদ্ধতিই অনুসরণ করে।
তবে পাখির ডানার ছায়া ও পায়ের হলুদ উজ্জ্বল রঙ মিলে মাছকে আরও প্রলুব্ধ করে মৃত্যুর দিকে টেনে আনতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। নিজেদের এই অসাধারণ কৌশলই কালো সারসকে নিঃসন্দেহে প্রাণীজগতের এক অন্যতম গুপ্ত শিকারির পরিচিতি দিয়েছে।