অভিনেত্রী রুনা খান দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ে অনিয়মিত। তার এই অনিয়মিত হওয়ার কারণ শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া। তার ওজন এক পর্যায়ে ১০৫ কেজিতে গিয়ে ঠেকে। তবে অভিনয়ে ফেরার জন্য তিনি ওজন কমানোর মিশনে নামেন। ওজন কমাতে কমাতে এখন তিনি ৬৬ কেজিতে এসেছেন।
এক বছর আগেও যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা এখনকার রুনা খানকে দেখে চমকে যান। রুনা খানের পরিবর্তন সবার চোখে পড়ছে। এক বছরে ৩৯ কোজি ওজন কমিয়ে তিনি পুরোপুরি বদলে নিয়েছেন নিজেকে।
তবে সবাই ১ বছরের বদলে যাওয়া রুনা খানকে দেখলেও এটি আসলে তাঁর ১০ বছরের একটা কষ্টকর ভ্রমণ ছিল বলে জানালেন। ওজন কমানোর গল্প শোনাতে গিয়ে কষ্টের সেই গল্পের ঝাঁপি মেলে ধরলেন রুনা খান।
একটি জাতীয় দৈনিককে রুনা খান বললেন, ‘ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছি না, বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার গল্প, আমার ওজন কমানোর গল্পটা সে রকমই। তিন পা আগাইতাম, চার পা পিছাইতাম। ১০ বছরে অস্ত্রোপচার ছাড়া সব চেষ্টাই করেছি। ধানমন্ডির প্রতিটা জিমে অন্তত ১০ বারও ভর্তি হয়েছি। ভারতীয় কালচারাল সেন্টারে ভর্তি হয়েছি ৫-৭ বার। উইমেন্স কমপ্লেক্সে সুইমিংয়ে কয়েকবার ভর্তি হয়েছি। অ্যারেবিসকে ভর্তি হয়েছি। বাসায় ট্রেডমিল, সাইকেলসহ ওজন কমানোর যন্ত্রপাতি কিনেছি। আক্ষরিক ১০ বছরে অনেক চেষ্টা করেছি। ডায়েট চার্টের খাবার দিয়ে আমার একটা ফ্রিজ পুরা থাকত—ডার্ক চকলেট, মাশরুম, ক্যাপসিকামসহ আরও কত কী। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।’
তাহলে কীভাবে কী হলো? রুনা খানের কথায় এটা জানা যায়, তাঁর জীবনের আসল চ্যালেঞ্জই দুই দশকের বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করা। ১০ বছর লেগেছে সঙ্গ ত্যাগ করতে। এরপর তাঁর ওজন কমানোর মিশনটা সহজ হয়ে যায়। কোনো জিমে যাওয়ার দরকার পড়েনি। লাগেনি সাঁতার, ট্রেডমিলে দৌড়াদৌড়ি এমনকি ডায়েট খাবারও।
রুনা তাই বললেন, ‘ওজন কমানোর জার্নিটা আসলে এক বছরের। এক বছরে আমি একটি পয়সাও ওজন কমানোর পেছনে খরচ করিনি। আমার বাড়িতে প্রতিদিন যে স্বাভাবিক খাবার রান্না হয়, সেখান থেকে পরিমিত খাবার খেয়েছি। সপ্তাহে এক দিন পোলাও অথবা তেহারি খাই। খুব ভালো লাগে। পছন্দের খাবার। এক বেলা এসব খাবার খেলেও বাকি দুই বেলা রুটিনের খাবারই থাকে। আর আমি আমার বাসার শোবার ঘর থেকে ড্রয়িংরুম পর্যন্ত প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘণ্টা হাঁটতাম। রাতে এক ঘণ্টা ইয়োগা করি। রাত ১২টা কিংবা ১টার মধ্যে ঘুমিয়ে যাই, কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাই। গত ১০ বছরে এসব পারিনি। আমার কাছে পৃথিবীর একদম সহজ উপায়। সহজ কাজটা গত এক বছর ধরে করতে পেরেছি। গত বুধবার পর্যন্ত ৩৯ কেজি ওজন কমাতে পেরেছি।’
ওজন কমাতে কাউকে প্রেরণা মনে করেননি। নিজের জন্য নিজে এ কাজটি করেছেন বলে জানালেন। আমার সঙ্গ তাড়াতে লেগেছে ১০ বছর, আর ওজন কমাতে মাত্র ১ বছর। দুই দশকের কয়েকজন বন্ধুর কারণে জীবনের এত বড় ট্রমায় যেমন রুনা খান পড়েছেন তেমনি এই এক বছরের জার্নিতে নতুন কিছু বন্ধুকে পাশে পেয়েছেন; যারা তাঁর জীবনে আশীর্বাদও।
রুনা খানের ভাষায়, দে ব্রিং হ্যাপিনেস ইন মাই লাইফ। এ যাত্রায় স্বামী ও সন্তান বেশ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বলে জানালেন রুনা। তিনি বললেন, ‘ওরা শুধু আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যই সব সময় পাশে ছিল। আমার সঙ্গে হাঁটত। দেখা যেত আমি রাতে ভাত খাচ্ছি না, আমাকে সাপোর্ট করতে সেদিন আমার হাজব্যান্ডও ভাত খেত না।’