ঢালিউড ক্যানভাসে যে ক’জন অভিনেতা পর্দার সামনে ও পেছনে সমান শাসন করেছিলেন তাদের একজন ওয়াসীমুল বারী রাজীব। শুধু খল চরিত্র বললে ভুল হবে, নানান ভূমিকায় তিনি রূপালি পর্দায় দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন। সেই দ্যুতির রেশ এখনও সিনেমাপ্রেমীদের মন ও সিনে ইতিহাসের পাতা আলোকিত করে।
আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) অভিনেতা রাজীবের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে (১৪ নভেম্বর) মাত্র ৫৪ বছর বয়সে তার নন্দিত জীবনের ইতি ঘটে।
রাজীবের পর ঢাকাই সিনেমা অনেক খল চরিত্র পেয়েছে তবে তারচেয়ে প্রভাবশালী কিংবা জনপ্রিয় খলনায়ক পাওয়া যায়নি সে অর্থে। তবে রাজীবের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ধরা হয় মিশা সওদাগরকে। তাই তো রাজীবের প্রয়াণ দিনে বাংলা ট্রিবিউন শরণাপন্ন হলো তার।
রাজীবের জন্য দোয়া কামনা করে মিশা বললেন, ‘অনেক ভালো এবং উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি। কোনও ঝুটঝামেলায় থাকতেন না। স্পষ্টবাদী ছিলেন, যখন যা বলার সরাসরি বলে ফেলতেন। প্রচুর মিস করি তাকে। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশতের উত্তম জায়গায় রাখেন, সেই দোয়া করি।’
একসঙ্গে বহু সিনেমায় কাজ করেছিলেন রাজীব ও মিশা সওদাগর। তবে প্রথমবার তারা এক পর্দায় হাজির হন ‘প্রিয় তুমি’ ছবিতে। সেই স্মৃতিতে চোখ রেখে মিশা বলেন, “এই ছবিতে আমি তার বন্ধুর ছেলে ছিলাম, যার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে চান। এতে একসঙ্গে কাজের পর উনি আমাকে যথেষ্ট পছন্দ করেন। এরপর তিনি নিজের প্রযোজনায় যখন সিনেমা বানালেন, নাম ছিলো ‘চালবাজ’; তখন আমাকে তিনি তরুণ ভিলেনের চরিত্রে নিয়েছিলেন। কিংবদন্তি রাজীব সাহেবের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সিনেমায় ভিলেন চরিত্র আমি করেছি, এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।”
‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমায় রাজীবের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মিশা। ছবিটির ‘এই বাবা ডায়ালগ কম’ সংলাপটি দর্শকের মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছিলো তখন। যা টের পেয়েছিলেন রাজীবও। ঘটনাটি জানালেন মিশা, “তিনি (রাজীব) আমাকে বলেছিলেন, ‘মিশা তুমি তো স্টার হয়ে গেলা!’ আমি বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করি, কী ভাইয়া! তখন তিনি বলেন, ‘আমি গাড়িতে করে আসছিলাম, পাড়ার ছেলেরা বলছিলো, এই বাবা ডায়ালগ কম। যখন দেখবে ছবি সুপারহিট, তোমার সংলাপ মানুষের মনে ধরে গেছে, তখন তুমি স্টার হয়ে গেছো।’ তার এই কথার বিপরীতে বলেছিলাম, দোয়া করবেন।”
মিশা জানান, তিনি খলচরিত্রে কাজ শুরুর পর রাজীবের কাছ থেকে অনেক উৎসাহ ও পরামর্শ পেয়েছিলেন। এমনকি তাকে বিভিন্ন ছবিতে নেওয়ার জন্য সুপারিশও করতেন রাজীব। ব্যক্তিগত পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক ছিলো। মিশার ভাষ্য, ‘ওনার সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক ছিলো আমার। উনি খেলাধুলা খুব পছন্দ করতেন, আমিও করি। খেলাধুলা নিয়ে আমাদের প্রচুর আলাপ হতো। শুটিংয়ে আমি যদি একটা ভালো শট দিতাম, তিনি তালি দিতেন।’
খল অভিনেতা হিসেবে রাজীবকেই নাম্বার ওয়ান মনে করেন মিশা সওদাগর। তার দাবি, ‘স্বাধীনতার পর খল অভিনেতার কথা যদি বলি, তাহলে আমার মতে রাজীব ভাই নাম্বার ওয়ান। ভিলেন আর্টিস্ট, শুধু ভিলেন না কিন্তু। এই হিসেবে তিনি সেরা, এক কথায় বললাম।’
রাজীবের পর ব্যাপক পরিসরে খল অভিনেতা হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন মিশা। এরপর আর কেউ তাদের জনপ্রিয়তার ধারেকাছে যেতে পারেননি। কেন? প্রশ্নটার উত্তর দিতে চাইলেন না মিশা। তবুও কিছুটা বললেন, ‘এটা বলার অধিকার আমার নেই। হয়ত কারও পক্ষে চলে যাবে, কারও বিপক্ষে যাবে। ইন্ডাস্ট্রিতে আসলে জায়গা করে নিতে হয়। নিজের যোগ্যতা এবং ভাগ্য দুটোই লাগে। এখন যেই প্রজন্ম কাজ করছে, তাদের জন্য দুর্ভাগ্য হলো এখন তো ইন্ডাস্ট্রিই নেই। রাজীব ভাইয়ের আমল তো বটেই ওনার পথ ধরে আমি যখন কাজ করি, তখনও হাজারের বেশি হল। সারাদেশে শুটিং। চারদিকে জয়জয়কার। তখনও ফিল্ম বাজার ছিলো, এখন সেটা একটা দোকান হয়ে গেছে। আরেকটা ব্যাপার হলো, খল অভিনেতা হিসেবে যদি স্পেশালিটি কিছু না থাকে, তাহলে টিকতে পারবে না। হয়ত দু’একটা ছবি ভালো যেতে পারে। কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সফল হওয়া যেমন কঠিন, সেটা ধরে রাখা আরও কঠিন জিনিস।’
উল্লেখ্য, রাজীবের জন্ম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালীতে। ত্রিশ বছর বয়সে ‘খোকন সোনা’ নামের ছবির মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক হয় তার। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকেই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মৃত্যুর আগ অবধি শক্ত হাতে নিজের ক্যারিয়ারের গতিপথ ঠিক রেখেছিলেন। অভিনয় করেছেন চার শতাধিক সিনেমায়।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হলো- ‘ভাত দে’, ‘ত্রাস’, ‘শেষ খেলা’, ‘দাঙ্গা’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেনমোহর’, ‘বাবার আদেশ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘লুটতরাজ’, ‘দেশ দরদী’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ ইত্যাদি। অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন রাজীব।
রাজীব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদের (জাসাস) প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরে সাধারণ সম্পাদক ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বিএফডিসির এমডি হিসেবেও পালন করেছেন দায়িত্ব।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.
