পরিচিত মুখ মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেত্রী রুনা খান। সম্প্রতি ৩৯ কেজি ওজন কমিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। তবে ওজন কমাতে কাউকে প্রেরণা মনে করেননি বলেও জানান তিনি। নিজের জন্য নিজে এ কাজটি করেছেন রুনা খান।
এ যাত্রায় স্বামী ও সন্তান বেশ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বলে জানান রুনা। বলেন, ‘ওরা শুধু আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যই সব সময় পাশে ছিল। আমার সঙ্গে হাঁটত। দেখা যেত আমি রাতে ভাত খাচ্ছি না, আমাকে সাপোর্ট করতে সেদিন আমার হাজব্যান্ডও ভাত খেত না। ’
রুনা খানের ওজন ছিল ৫৬ কেজি। ২০০৯ সালে বিয়ে হয় তার। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ওজন। এরপর সন্তান জন্মের সময় তার ওজন দাঁড়ায় ৯৫ কেজিতে। একটা পর্যায়ে ওজন গিয়ে ঠেকে ১০৫ কেজি পর্যন্ত। তবে বর্তমানে তিনি এখন ৬৬ কেজিতে।
কীভাবে এমন অসাধ্য কাজ সাধন করলেন সেই গল্প গণমাধ্যমে রুনা খান নিজেই জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো ৩৯ কেজি ওজন কমাতে তাকে ডায়েট, জিম কিছুই করতে হয়নি। শুধুমাত্র কিছু টক্সিক মানুষের সঙ্গ ত্যাগ আর স্বাভাবিক খাবারেই করেছেন বাজিমাত।
তিনি জানান, শুরুতে ওজন কমানোর মিশনে কতকিছুই না করেছেন তিনি। জিম, সুইমিং, ইয়োগা, অ্যারোবিকস ক্লাস, ডায়েট ইত্যাদি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। সবকিছু ছেড়ে দেন। হতাশা, মানসিক অবসাদসহ নানা সমস্যা পেয়ে বসে।
রুনা খান বলেন, ‘ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছি না, বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার গল্প, আমার ওজন কমানোর গল্পটা সে রকমই। তিন পা আগাইতাম, চার পা পিছাইতাম। ওই ১০ বছরের অস্ত্রোপচার ছাড়া সব চেষ্টাই করেছি। ধানমন্ডির প্রতিটা জিমে অন্তত ১০ বারও ভর্তি হয়েছি। ভারতীয় কালচারাল সেন্টারে ভর্তি হয়েছি ৫-৭ বার। উইমেন্স কমপ্লেক্সে সুইমিংয়ে কয়েকবার ভর্তি হয়েছি। অ্যারেবিসকে ভর্তি হয়েছি। বাসায় ট্রেডমিল, সাইকেলসহ ওজন কমানোর যন্ত্রপাতি কিনেছি। আক্ষরিক ১০ বছরে অনেক চেষ্টা করেছি। ডায়েট চার্টের খাবার দিয়ে আমার একটা ফ্রিজ পুরা থাকত—ডার্ক চকলেট, মাশরুম, ক্যাপসিকামসহ আরও কত কী। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ’
রুনা খান বলেন, ‘২০১৯ এসে আবিষ্কার করলাম, আমি এমন কিছু সঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত থাকি, যাদের আমি বন্ধু মনে করি। মনে করি, তারা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আমি আসলে এই তাদের দ্বারা মানসিকভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছি। যে কারণে আমার মূল কাজে মনোযোগ রাখতে পারতাম না। তারা এটা ভালোভাবে জানত যে কীভাবে আমার মনোযোগ নষ্ট করা যায়। তত দিনে দেখলাম, ওজন হয়ে গেছে ১০৫ কেজি। এমন না যে ওজন কমছে না। এমন হচ্ছিল যে কোনো মাসে ৫ কেজি ওজন কমালাম, পরের মাসে ৬ কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেললাম। ফলাফল সেই, যা, তা-ই। একটা পর্যায়ে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে টক্সিক মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। যাদের আমি তথাকথিত বন্ধু ভাবছি, তাদের কাছ থেকে বের হতে হবে। ’
রুনা খান তাঁর যেসব বন্ধুর কথা বলছিলেন, তাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা দুই দশকের। বলেন, ‘তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা শুরুতে কঠিন ছিল। লোকে কী ভাববে। লোকে কী বলবে। কিন্তু নিজের বাঁচার জন্য আমি ত্যাগ করেছি ধীরে ধীরে। ’
অভিনেত্রী জানান, তার জীবনের আসল চ্যালেঞ্জই দুই দশকের বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করা। ১০ বছর লেগেছে সঙ্গ ত্যাগ করতে। এরপর তার ওজন কমানোর মিশনটা সহজ হয়ে যায়। কোনো জিমে যাওয়ার দরকার পড়েনি। লাগেনি সাঁতার, ট্রেডমিলে দৌড়াদৌড়ি এমনকি ডায়েট খাবারও।
রুনা বলেন, ‘ওজন কমানোর জার্নিটা আসলে এক বছরের। এক বছরে আমি একটি পয়সাও ওজন কমানোর পেছনে খরচ করিনি। আমার বাড়িতে প্রতিদিন যে স্বাভাবিক খাবার রান্না হয়, সেখান থেকে পরিমিত খাবার খেয়েছি। সপ্তাহে এক দিন পোলাও অথবা তেহারি খাই। খুব ভালো লাগে। পছন্দের খাবার। এক বেলা এসব খাবার খেলেও বাকি দুই বেলা রুটিনের খাবারই থাকে। আর আমি আমার বাসার শোবার ঘর থেকে ড্রয়িংরুম পর্যন্ত প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘণ্টা হাঁটতাম। রাতে এক ঘণ্টা ইয়োগা করি। রাত ১২টা কিংবা ১টার মধ্যে ঘুমিয়ে যাই, কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাই। গত ১০ বছরে এসব পারিনি। আমার কাছে পৃথিবীর একদম সহজ উপায়। সহজ কাজটা গত এক বছর ধরে করতে পেরেছি। গত বুধবার পর্যন্ত ৩৯ কেজি ওজন কমাতে পেরেছি। ’
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.
