শুরুর দিকে বিনোদন অঙ্গনে একটানা কাজ করেছিলেন সারিকা সাবরিন। বিজ্ঞাপনচিত্র ও নাটকে অভিনয় করে পেয়েছিলেন জনপ্রিয়তা। এরপর হঠাৎ উধাও হয়ে যান তিনি।
অনেক দিন পর আবার ফিরেছেন তিনি। সম্প্রতি উপস্থাপনা শুরু করেছেন তিনি। উত্তরায় একটি খণ্ড নাটকের শুটিং সেটে বসে সেসব নিয়ে কথা বললেন এই অভিনেত্রী।
প্রশ্নঃ বিরতির পর কাজে ফিরে কেমন লাগছে? করোনার নতুন স্বাভাবিকে একদম স্বাভাবিকভাবে কাজ শুরু করেছি। খুব ভালো লাগছে। চেনা জায়গা, চেনা মানুষেরা—সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।
প্রশ্নঃ কর্মপরিবেশে কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েছে? এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। আমি অবশ্য আমার কাজে বেশি ফোকাসড। টেলিভিশনের পাশাপাশি ইউটিউবনির্ভর কাজ শুরু হওয়ায় অনেকের অ্যাটিটুড ধর–মার–কাট–মার্কা কাজ করার মতো। কিন্তু আমি মোটামুটি ভালো পরিচালক ও গল্পে কাজ করছি। সবাই দেখি এখন ভিউ নিয়ে মাতামাতি করে, ট্রেন্ডিং গল্পে কাজ করতে চায়। যদিও আমি ওসবের বিরুদ্ধে কথা বলছি না, কিন্তু আমার পছন্দের সঙ্গেও আপস করছি না।
প্রশ্নঃ মাঝে অনেক দিন অনিয়মিত ছিলেন। এ নিয়ে অনুতাপ হয়? আমার মনে হয়, যে বয়সে আমি জনপ্রিয়তা পেয়েছি, সেটা যদি এখন হতো, তাহলে বুঝতাম। তখন বয়স কম ছিল, অনেক কিছু বুঝিনি। এই না বোঝার কারণে ক্যারিয়ারের একদম পিক টাইমে কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত হতে পারিনি। এদিকে আমার মেয়েও ছোট ছিল। পারিপার্শ্বিক নানা কারণ ছিল। মেয়ে এখন বড় হচ্ছে, আমি শুটিংয়ে এলে সে বলে, ‘মাম্মি ভালোভাবে কাজ করো।’ আগে যেমন শুটিংয়ে আসার আগে কান্নাকাটি করত। ওকে ঠান্ডা করে শুটিংয়ে এলেও মনটা পড়ে থাকত ঘরে। আমি মানসিকভাবে ঠিক ছিলাম না। সবকিছু কাটিয়ে উঠতে সময় লেগে যায়। তবে আমি আফসোস করি না। নতুন স্বাভাবিকে আমিও নিজেকে পুরোপুরি গুছিয়ে নিয়েছি। এখন পরিচালকেরা আমাকে নির্ধারিত সময়ের আগে শুটিং স্পটে পান। সবার কাছ থেকে এমন কথা শুনে খুব ভালো লাগছে।
প্রশ্নঃ অথচ একটা সময় দেরির কারণে আপনাকে সমালোচিত হতে হয়েছিল। তাই না? সব মিলিয়ে আমি ওই সময়টাকে হ্যান্ডেল করতে পারছিলাম না। এখন আমি প্রায়ই ভাবি, কেন আমার দেরি হতো। সামনে এমনটা যাতে না হয়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রশ্নঃ সন্তান সামলানোর কথা বলছিলেন, কিন্তু বিয়ের আগেও তো আপনার শুটিংয়ে দেরি নিয়ে কথা হতো। বিয়ের আগে দেরি নিয়ে খুব বেশি অভিযোগ ছিল না। তখন তো মাসে ৩০ দিনই শুটিং করতাম। এতে টাইম ম্যানেজমেন্টে সমস্যা হতো। দেখা যেত পুবাইল থেকে অনেক রাতে এসে পরদিন সকালে আবার ঠিক সময়ে উত্তরায় পৌঁছানো সম্ভব হতো না। এখন কাজ কমিয়ে এনেছি। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। বলতে পারেন, আমি এখন আগের চেয়ে ম্যাচিউরড। নিজের সমস্যাগুলোও বোঝার চেষ্টা করছি।
প্রশ্নঃ বিরতি থেকে ফেরার পর যেসব নাটক, টেলিছবির কাজ করলেন, গল্পগুলো কেমন? আমি যে খুব ট্রেন্ডিং গল্পে কাজ করেছি, তা নয়। ওই ধরনের গল্পের প্রস্তাবও যে পাচ্ছি, তা না। আমার সব কাজ যে ইউটিউবের, তা–ও না। কিছু গল্প মজার পাচ্ছি, কিছু সিরিয়াস। কিছুদিন আগে একটা নাটকের কাজ করেছি, যেখানে আমি ৬০ বছরের একজন নারী।
প্রশ্নঃ আপনাকে ইদানীং উপস্থাপনা করতে দেখা যাচ্ছে। কোন আত্মবিশ্বাস থেকে এটি করার সাহস করলেন? উপস্থাপনা যদিও আমার ঘরানার না, তারপরও অনেক প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু সব সময় ভেবেছি, আমাকে দিয়ে হবে না। আগে বয়সও কম ছিল, খুব কেয়ারলেস ছিলাম, যা ভাবতাম তা–ই করতাম। এখন মনে হচ্ছে, অন্য রকম কিছু করি। কিছুদিন আগে বাংলাভিশন যখন ‘আমার আমি’ অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিল, ভাবলাম, দেখি না একটু নিজেকে নতুনভাবে। যদি পারি তাহলে নিয়মিত হব, না হলে তো নয়। আয়োজকদেরও তেমনটাই বলেছি। আম্মুকে বলার পর তিনি বেশ খুশি। কারণ, ‘আমার আমি’ তাঁর খুব প্রিয় অনুষ্ঠান। প্রথম দিন যথেষ্ট নার্ভাস ছিলাম। এরপর থেকে এনজয় করা শুরু করলাম।
প্রশ্নঃ কোন প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি বিরক্তিকর ছিল? বিরক্তিকর প্রশ্ন যে কত শুনতে হয়, বলে শেষ করা যাবে না। এখন সেই প্রশ্ন আমি নিজেও ‘আমার আমি’ অনুষ্ঠানে করে ফেলি। পরক্ষণে মনে পড়ে, আমিও করলাম এ প্রশ্ন! প্রশ্নটা হচ্ছে, একটা মজার ঘটনা বলবেন?
প্রশ্নঃ কেমন সিনেমায় কাজ করতে চান? আমি অতশত বুঝি না। ভালো গল্প, ভালো পরিচালক এবং ভালো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হলেই চলবে।
প্রশ্নঃ সহশিল্পী কতটা ফ্যাক্টর? সহশিল্পী একটা ফ্যাক্টর। সহশিল্পী যদি ভালো না হয়, তাহলে যত চেষ্টাই করি না কোন, লাভ নেই। আমি ভালো অ্যাকশন দিলে সহশিল্পী ভালো রিঅ্যাকশন দেবে। সেই জায়গা থেকে ভালো সহশিল্পী কে না প্রত্যাশা করে? গল্পের জায়গা থেকে যে মানানসই, তাকে নিলেই চলে। শুধু আমি চাইলে তো আর হবে না।
প্রশ্নঃ বিনোদন অঙ্গনের অনেকের মতে, সারিকা যদি একটু সিনসিয়ার হতো তাহলে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারত। আপনি কী মনে করেন?
দ্বিমত করব না, আবার একমতও হব না। আমি যেসব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি, একটা কথা বলতে পারি—সেটে ঢুকলেই আমি খুবই সিরিয়াস। এমন না যে আমি হেলাফেলায় কাজ করে বাড়ি ফিরে যাই। ছোট কাজ হোক, আর বড় কাজ হোক, আমার শতভাগ চেষ্টা থাকে। তবে কেন যেন মনে হয়, আমার হিসাব–নিকাশে ভুল ছিল।
প্রশ্নঃ কেন এমনটা মনে হচ্ছে? আমার মনে হয়, ভুল সময়ে বিরতি নিয়েছি। নিজেকে গুছিয়ে উঠতে পারিনি। যাহোক, ওই সময়ে যদি কিছুটা সিনসিয়ার থাকতাম, আরও ভালো অবস্থানে থাকতে পারতাম। ওই সময়টার ভুল কিছু সিদ্ধান্তের কারণে এমনটা হয়েছে। তবে এসব নিয়ে আমার মোটেও আফসোস বা অনুতাপ নেই। পুরো ব্যাপারগুলোকে আমি শিক্ষা হিসেবে নিয়েছি।