এতদিন আমরা দেখেছি কিস্তিতে টেলিভিশন, ফ্রিজ, ফার্নিচার বিক্রয় করতে। তবে এবার এক ভিন্ন ধর্মী কিস্তির সাক্ষী হলো যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের কাজীপুরবাসী। সেখানে দেখা গেলো চার তরুণ বন্ধুকে কিস্তিতে মাংস বিক্রি করতে। আর তাদের দেয়া এই সুবিধা ভোগ করছেন গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সকালে কাজীপুর গ্রামে চার বন্ধু মিলে এই মাংস নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এই মাংস বিক্রি করেন। কিস্তিতে গরুর মাংস বিক্রেতারা হলেন- একই গ্রামের চার বন্ধু নাহিদ হাসান, লালন হাসান, জাহিদ হাসান ও আবু সাঈদ। এ সময় সিরিয়াল ধরে কিস্তিতে মাংস কিনছিলেন ওই গ্রামের কৃষক, ভ্যানচালক, দিনমজুর ও রিকশাচালকরা।
ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেওয়া চার বন্ধু জানান, বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে গ্রামের নিম্নআয়ের মানুষেরা। গ্রামের অধিকাংশই কৃষি কাজ বা দিনমজুরি করে সংসার চালায়। বাজারে গরুর মাংসের যে দাম সেই দামে এক কেজি মাংসের টাকা যোগাড় করা তাদের জন্য কষ্টকর। তাই কোরবানি ঈদ এলে দান করা মাংস দিয়েই পূরণ হয় নিম্নআয়ের মানুষদের আমিষের চাহিদা। এ অবস্থা দেখে তাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এমন উদ্যোগ।
বছর খানেক আগে এক আড্ডায় কিস্তিতে মাংস বিক্রির পরিকল্পনা মাথায় আসে তাদের। তারপর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি শুক্রবার সকালে গরু জবাই করে স্থানীয়দের কাছে বাজার দরে মাংস বিক্রি করেন তারা। যে যার সামর্থ্য ও প্রয়োজন মতো মাংস ক্রয় করে। মাংস কেনার সময় কেউ টাকা দিতে না পারলে প্রতি মাসে দুই বা তিন কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করেন।
লালন হাসান বলেন, আমরা চার বন্ধু মিলে গ্রামের জন্য কিছু করার চিন্তা ভাবনা থেকে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছি। আমরা চাই যে নিম্নআয়ের মানুষের খাবারের চাহিদা পূরণ হোক। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা কিস্তিতে গরুর মাংস বিক্রি করছি। আরেক বন্ধু নাহিদ হাসান বলেন, কারও কারও টাকা পরিশোধ করতে কয়েক মাসও পার হয়ে যায়। তবে দিন শেষে মনে পরিতৃপ্তি থাকে এই ভেবে যে, এলাকাবাসীর জন্য কিছু করতে পারছি। এদিকে বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিস্তিতে মাংস কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারাও।
মাংস কিনতে আসা একজন বলেন, শহরে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করি। যে বেতন পাই তা দিয়ে সপ্তাহে বা মাসে এক কেজি মাংস কেনার টাকা যোগাড় করা কঠিন। তাই এখান থেকে কিস্তিতে মাংস কিনি। কখনো দুবারে আবার তিনবারেও টাকা পরিশোধ করি। এভাবে কিনতে পারায় অন্তত মাসে একবার হলেও পরিবারের মুখে মাংস তুলে দিতে পারছি।
আরেক ক্রেতা বলেন, কিস্তিতে গরুর মাংস বিক্রির ঘটনা এলাকায় এই প্রথম। বাড়িতে অনুষ্ঠান। তাই চার কেজি মাংস কিনে দিয়েছি ৮০০ টাকা। বাকিটা কিস্তিতে পরিশোধ করব। রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ বলেন, এটা অবশ্যই ভালো একটা উদ্যোগ। তবে তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে ভালো মানের সুস্থ গরু জবাই করে বিক্রির জন্য।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.
