মাটি ছুঁই ছুঁই করে ঝুলছে নারিকেল! গাছে ওঠা দূরে থাক, মাটিতে বসেই নারিকেল পাড়া যাবে! এমন কথা বললে মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি না ‘ডুয়া এক্সিম লু’ জাতের নারকেলের কথা জানা থাকে।
বামন আকৃতির এই নারিকেল গাছই সম্ভব করেছে ওই অসম্ভবকে। জানা গেছে, ভিয়েতনামের ‘ডুয়া এক্সিম লু’ প্রজাতির এ নারকেল খুলনার দৌলতপুর ও সাভারের রাজালাখ হর্টিকালচার সেন্টারে শোভা পাচ্ছে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি দ্রুত বর্ধনশীল খাটো জাতের এ নারকেল গাছে ১৮ মাসের মধ্যেই ফুল চলে আসে এবং তিন বছরের মাথায় ফল পরিপূর্ণ হতে শুরু করে।
গণমাধ্যমের খবর, সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত দ্রুত নারকেল আসে-এমন জাতের যেসব গাছের উদ্ভাবন এবং চাষাবাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে তার মধ্য ভিয়েতনামের এই জাতটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এই গাছ একটানা ৭০/৮০ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে। স্বাদে-গন্ধে, আকার ওপুষ্টিমানে এটি অসাধারণ। সুস্বাদু। এছাড়া ভারতের ‘গঙ্গাবন্ধন’ জাতের নারকেল গাছেও দ্রুত ফল আসে। জানা গেছে, ‘ডুয়া এক্সিম লু’ নারকেলের জাতটির আদি উৎপত্তি থাইল্যান্ডে যা ‘সিয়াম’ নামে পরিচিত। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য থাইল্যান্ডে এই জাতের নারকেল ব্যাপক পরিচিত ও জনপ্রিয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়সূত্র জানিয়েছে, এই খাটো জাতের হাইব্রিড নারকেল গাছের চাষে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ নারকেল গাছ সনাতনী গাছের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি ফল দেবে। গাছের উচ্চতা ২ থেকে ৪ ফুট হলেই ফল ধরা শুরু করে। মাটিতে ছুঁই ছুঁই এ নারকেল মাটিতে বসেই পাড়া যাবে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু এই গাছ সব ধরনের মাটিতে চাষের উপযোগী।
এ চারা পরিচর্যা করা সহজ। ঝড়ে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কম ক্ষতি হয়।সূত্র জানিয়েছে, ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর মাধ্যমে উন্নত জাতের এ নারকেলের জাতটি দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, এ দেশে থাই পেয়ারার প্রবক্তা কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান ভিয়েতনামে গিয়ে নারিকেলের দু’টি জাত সনাক্ত করেন। একটির নাম হচ্ছে সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ও অন্যটির নাম হচ্ছে সিয়াম গ্লু কোকোনাট।
এই জাতের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো নারিকেল থেকেই এর চারা হবে। দুই থেকে আড়াই বছরে গাছে মুচি আসবে। প্রতিটি ডাব থেকে ৩০০ এমএল পানি পাওয়া যাবে। সিয়াম গ্লু কোকোনাট জাতটির পানি খুবই মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত। এটি বেঁটে প্রজাতির জাত। নারিকেল পারা সহজ। বর্তমানে নারিকেলে মাকড়ের আক্রমণ শুরু হয়েছে।
বড় গাছের মাকড় মা’রা সম্ভব হচ্ছে না।কিন্তু এই গাছের মাকড় খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সূত্র আরও জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় সারা বছর ফল উৎপাদনের জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘বছরব্যাপি ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’। এই প্রকল্পের অধীন প্রথম ধাপে ভিয়েতনাম থেকে ২০ হাজার ওই নারিকেল চারা আনা হয়েছে।