গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শি’বচরে। তার আসল নাম সাহিনা আকতার। ছোটবেলায় যখন কোনো পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেন তখন তাকে দেখে কেউ বলতো সুচরিতার মতো দেখতে,
কেউ বলতো এতো দেখি নায়িকা নতুনের মতো। এসব শুনতে শুনতে ছোটবেলা থেকেই মা’থায় ঢুকে যায় নায়িকা হতে হবে তাকে। কিন্তু ১২-১৩ বছর বয়সেই শ্যামল কুমা’র কণ্ঠের সঙ্গে বিয়ে হয়ে
যায় তার। বলা হচ্ছে চিত্রনায়িকা বনশ্রীর কথা। সুবচন নাট্য সংসদে যোগ দেবার পর ঢাকার মহিলা সমিতি মঞ্চের দর্শকের কাছে এক সময় পরিচিতি পেতে থাকেন নব্বই দশকে চলচ্চিত্রের আ’লোচিত মুখ বনশ্রী।
১৯৯৬ সালে ‘সোহরাব-রুস্তম’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অ’ভিষেক হয় তার। এ ছবিতে তার নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এরপর তিনি ‘নে’শা’, ‘মহাভূমিকম্প’, ‘প্রে’ম বিসর্জন’, ‘ভাগ্যের পরিহাস’ নামের চলচ্চিত্রগুলোতে অ’ভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। তবে তার জীবনের রঙিন গল্পটা ছিল খুবই অল্প সময়ের।
কারণ বনশ্রী মাঝে দারিদ্র্যতার কবলে পড়ে বাসে বাসে বই বিক্রি করেছেন, ফুল বিক্রি করেছেন শাহবাগে। এক সময় আলিশান ফ্ল্যাটে থাকলেও বর্তমানে মোহাম্ম’দপুরের শেখের টেকের একটি বস্তিতে থাকেন তিনি। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিয়ের পর প্রোডাকশন হাউজের মালিক মোহম্ম’দ ফারুক ঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি বাংলা সিনেমায় আমাকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
তবে তিনি শর্ত দিয়েছিলেন যে বিয়ের বিষয়টি গো’পন রাখতে হবে। তাই বিয়ের বিষয় গো’পন রেখেই ফিল্মে কাজ শুরু করেছিলাম। ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, রুবেল, অমিত হাসানসহ অনেকের সঙ্গে ফিল্মে প্রধান নায়িকা চরিত্রে কাজ করেছি। তবে চলচ্চিত্র জীবনের শুরুতে আমা’র একটা সময় বাধা হয়ে দাঁড়ালো পেটের সন্তান। যখন তার ক্যারিয়ারের সুবাতাস চলছিল তখনই বনশ্রী সন্তান সম্ভাবা হন।
বনশ্রী মা হতে রাজি না হলেও ডাক্তার জানান, তার বাচ্চা অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন নষ্ট করলে ভবিষ্যতে তার আর বাচ্চা হবে না। তাই বাধ্য হয়েই মা হন তিনি। কন্যা সন্তান শ্রাবন্তী আসে তখন পৃথিবীতে। এরপর কিছুদিন চলচ্চিত্রে কাজ করা হলেও পরে আর কাজ করা হয়ে ওঠেনি বনশ্রীর। চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান। পরে একটি ছে’লে সন্তানও হয় তার। কিন্তু সংসারও ভেঙে যায়। চলচ্চিত্রে এত খ্যাতি আসার পরও কেন বই বিক্রি বা ফুল বিক্রি করতে হয়েছে আপনাকে?
জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে স্বামীও ছেড়ে দেয় আমাকে। আমা’র মে’য়ে সন্তান শ্রাবন্তীকে হারিয়ে ফেলি আমি। যখন মোহাম্ম’দপুর এলাকায় আসলাম তখন আমা’র বয়সও ছিল কম। একমাত্র ছে’লে সন্তান আপন ছিল কোলে। এলাকায় তখন গুণ্ডা-মাস্তান বিভিন্নভাবে সমস্যা করতো। কোনো বাড়িতে দুই মাসের বেশি থাকতে পারি নাই। টাকা-পয়সাও একটা সময় শেষ হয়ে যায়। কী’’ করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে বই বিক্রি ও পরে ফুল বিক্রি করেছি।
বনশ্রী আরো বলেন, নায়িকা থাকাকালীন ঢাকা ক্লাবে একটা সময় যাওয়া আসা ছিল আমা’র। সেখানে কাজ করতেন জীবন ভাই। তিনি একদিন আমাকে রাস্তায় দেখে ফুল বিক্রির কাজ দেন। মাঝে মানিকগঞ্জের আসক্তি পুনর্বাসন নিবাস ‘আপন’-এ কিছুদিন মানসিক চিকিৎসা নিয়েছিলাম। আর ছে’লেকে বর্তমানে সাভা’রের একটি এতিমখানায় বড় করছি। মাঝে সরকারি সহায়তা ছাড়াও ইলিয়াস কাঞ্চন, চ্যানেল আই, নায়ক-প্রযোজক অনন্ত জলিলসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান তাকে সাহায্য করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি এ সাহায্যের বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় একটা সময় আমা’র অ’সুস্থতা ও দারিদ্র্যতার খবর প্রকাশের পর সাহায্য অনেকে করেছেন। তবে সেই সাহায্যের টাকার পরিমাণ ছিল সামান্য। সকলের সাহায্যের পর এখন ভাড়া দিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারছি। অ’সুস্থ আমি এখন। ফুলের ব্যবসার সঙ্গে জ’ড়িত আছি। ভবিষ্যতে শাহবাগে একটি ফুলের দোকান দেবার স্বপ্ন দেখছেন বনশ্রী।