পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে মরুভূমির খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন স্বপ্নবাজ কৃষক। পাহাড়ি জনপদে চাষ শুরু হওয়া খেজুরের আকার ও স্বাদ মরুভূমির খেজুরকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি এ কৃষকের।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে রসুলপুর গ্রামের গভীর অরণ্য ভেদ করে বিশালাকার টিলা ভূমিতে স্বপ্নের খেজুর চাষ শুরু করেন মো. নুরুল আলম।
খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করার ৩ বছরের মাথায় ২০২২ সালে প্রথম সফলতা পান এ কৃষক। দেশের মাটিতেই মরুভূমির খেজুরের স্বাদ গ্রহণ করেন। প্রথম বছরেই লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করে স্বপ্নের ভিতকে মজবুত করেন। চলতি বছর ২ লাখ টাকারও বেশি খেজুর বিক্রির আশা করেন তিনি।
রসুলপুর এলাকায় মো. নুরুল আলমের খেজুর বাগান ঘুরে দেখা গেছে, থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর। হলদে-সবুজ আর লালচে রঙের খেজুরগুলো শোভা পাচ্ছে বাগানে। প্যাকেটে মোড়ানো খেজুর দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। দেশের মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে মরুভূমির খেজুর চাষের খবরে বাগানে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।
দীর্ঘ বছর ধরে আইটি সেক্টরে সৌদি আরব ও বাংলাদেশে কাজ করা মো. নুরুল আলমের নিবাস ঢাকার শ্যামলীতে। মো. নুরুল আলম আত্মীয়তার সূত্র ধরে পাহাড়ে বেড়াতে এসে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যান।
আইটি সেক্টরে কাজ করা মানুষ কীভাবে কৃষি সেক্টরে এলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. নুরুল আলম বলেন, ‘কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই কৃষি সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সেই আগ্রহ থেকে ২০১৯ সালের দিকে সবুজ পাহাড়ের ১৩ একর টিলা ভূমি কিনি। এরপরই শুরু করি কৃষি খামার গড়ে তোলার কাজ।’
তার তিন বছর বয়সী কৃষি খামারে এখন গড়ে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বাগানের পানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সাড়ে ৬ হাজার ওয়াটের সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছেন এ উদ্যোক্তা। যা দিয়ে বাগানের পানির সমস্যা সমাধান হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘খেজুরের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে চাই। আমদানি নির্ভর ফলের চাষ করলে দেশের অর্থ বাঁচবে। যেসব কৃষি ফল হারভেস্ট করার পরও মাসাধিককাল সংরক্ষণ করা যায়; সেসব ফলের চাষ করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।’
মো. নুরুল আলম ২০১৯ সালের দিকে সৌদি আরব ও ইংল্যান্ড থেকে ১০০টি টিস্যু কালচার চারা সংগ্রহ করে পাহাড়ি পরিত্যক্ত টিলা ভূমিতে বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। এরমধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ২৪টি গাছ ফলন দেয়। ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে সব গাছে ফলন আসবে।
বারোহি, আজওয়া, মিটজল ও আম্বার জাতের খেজুরের জাত আছে। প্রায় অর্ধেক গাছেই ফল ধরতে শুরু করেছে। আগামী দেড়-২ বছরে মধ্যে বাকি গাছে ফল ধরতে শুরু করবে। এ বছর প্রায় ২ লাখ টাকার খেজুর বিক্রির আশা করলেও আগামীতে ফলন ভালো হওয়া সাপেক্ষে বিক্রি আরও বেশি হবে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী বলেন, ‘পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া সৌদি আরবের খেজুর চাষের অনুকূল। মো. নুরুল আলম সৌদি খেজুর চাষ করেছেন। খেজুর বাগান পরদির্শন করে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাগান দেখে মনে হচ্ছে, এখানে খেজুর চাষ লাভজনক হবে। নতুন যারা চাষ করবেন, তাদের কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনে চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.