নোয়াখালীতে সাংবাদিক দম্পতির ছাদবাগানের দুর্লভ ১৪০ প্রজাতির ফলজ ও ওষুধি গাছের মধ্যে মিললো বিশ্বের সবচেয়ে দামি মরিচ। দেখতে গোলাকার প্রতিকেজি মরিচের দাম ২৬ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৮ লাখেরও বেশি। দামি এই মরিচ গাছ দেখতে সাংবাদিকের ছাদবাগানে ভিড় করছে মানুষ। তাদের মন্তব্য বাণিজ্যিকভাবে এই মরিচ চাষাবাদে অর্জিত হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা।
জেলার সদর কালিতারা বাজার এলাকায় দোতলা বাড়ির ছাদে ২০১৯ সালে শখের বশে বাগান গড়ে তোলেন সাংবাদিক দিলদার উদ্দিন এবং তাঁর স্ত্রী চরউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা ইমাম শিল্পী। মাত্র ৪ বছরের মাথায় তাদের ছাদবাগনে স্থান পেয়েছে পার্সিমন, পিচফল, ত্বীনফল, চেরিফল, মালবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, ট্যাং ফল, পিনাট বার্টার, মিয়াজাকি আম, রামভুটান, বেরিকেটেট মাল্টা, আপেল, কমলাসহ ১৪০ প্রজাতির দুর্লভ ফলজ ও ওষুধি গাছ।
এরমধ্যে ছাদবাগানে বর্তমানে দর্শক আকর্ষণ করছে আমেরিকার পেরু অঞ্চলের বিখ্যাত ও সুসাধু মরিচ ‘চারাপিতা’। যে মরিচের প্রতিকেজি বাজার দর ২৬ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৮ লাখেরও বেশি। সাংবাদিক দিলদার উদ্দিন বলেন, ২০২১ সালে আমেরিকা ফেরত তার মেয়ের শাশুড়ি দেশে ফিরে দাওয়াত করে খাবারের সঙ্গে পেরুর দুটি ছোট গোলাকার আকৃতির মরিচ খেতে দেয়। তিনি খাবারের সঙ্গে ওই মরিচ না খেয়ে তাঁর ছাদবাগানে চারা করেন। সেখানে দুটি চারা গজিয়ে টানা পৌনে দুই বছর যাবৎ ফলিত মরিচ আহরণ করছেন তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউটিউবের মাধ্যমে জানতে পারেন এটি বিশ্বের সবচে দামি মরিচ। এতে আর্চায্য হয়ে পড়েন সাংবাদিক দম্পতি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। সাংবাদিক দিলদারের স্ত্রী সালমা ইমাম শিল্পী বলেন, শখের বশে বাড়ির ছাদে বাগানটি করেছি। আমার স্বামী বাগানে দেশীয় প্রজাতির গাছের চারাকে প্রাধান্য না দিয়ে বিদেশি প্রজাতির প্রায় ১৪০ দুর্লভ ফলজ ও ওষুধি গাছ লাগিয়েছেন। বাগানে সবচে দামি গাছ চারাপিতা মরিচ গাছ, যা দেখতে প্রতিনিয়ত মানুষ ছাদবাগানে ভিড় করে। আমরা বাগানের এই মরিচ আত্মীয়স্বজন ও বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীদের উপহার দিয়ে তৃপ্তি পায়।
ছাদবাগান ও চারাপিতা মরিচ দেখতে আসা দর্শনার্থী হারুন অর রশিদ, ফেরদৌসি বেগম পান্না বলেন, বিশ্বের সবচে দামি মরিচ চারাপিতা দেখে খুব ভালো লেগেছে। জীবনে এই দুর্লভ মরিচ দেখবো, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। মরিচটি অত্যন্ত সুসাধু সুঘ্রাণযুক্ত। এই দুর্লভ মরিচ আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে ছাষাবাদ করতে পারলে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, এই মরিচজাত আমাদের জন্য একেবারেই নতুন। পেরু অঞ্চলের দামি এই মরিচ আমাদের নোয়াখালীর সাংবাদিক দিলদার সাহেব তাঁর ছাদবাগানে চাষ শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ছাদবাগানের পাশাপাশি এক ইঞ্চি জায়গাও খালি থাকবে না, সেই লক্ষে আমরা যে কোনো কৃষক এই মরিচ চাষাবাদে আগ্রহী হলে সব ধরণের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান করা হবে। আমরাও চাই দুর্লভ এই মরিচ চাষের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
ছাদবাগনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সম্পৃক্ত করে চারাপিতা মরিচ চাষাবাদে দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।