বন্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা প্রচার হচ্ছে, তা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনারের এটিই ছিল প্রথম সাক্ষাৎ।
পরে সাংবাদিকদের বিস্তারিত ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরার বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণব ভার্মা বলেছেন, এতো বৃষ্টিপাত হয়েছে এটা ভারতেরও ধারণার বাইরে ছিল। সামাজিক মিডিয়াগুলোতে যেমনটি প্রচার হচ্ছে এটাকে দুঃখজনক বলেছেন ড. ইউনূস।’
ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্যায় এখন পর্যন্ত দুজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুজনের মধ্যের একজন ফেনীর ও একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। এখন পর্যন্ত এই ৮ জেলায় ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও বন্যার পরিস্থিতির জন্য ভারতকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ছাড়া বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত অমানবিক আচরণ করেছে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে।’
অবশ্য ভারত সরকারের দাবি, বাংলাদেশের বন্যা গোমতির নদীর ওপর নির্মিত ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে হয়নি। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাঁধের নিচের দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারের বর্ষায় বৃষ্টিপাত বেশি হতে পারে বলে আগেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে জানান, চলতি বছরের এপ্রিলে ভারতের পুনে শহরে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট আউটলুক ফোরামের ২৮তম অধিবেশনে বলা হয়েছিল, এবারের বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের বৃষ্টি যেমন বেশি হবে, তেমনি বাংলাদেশের উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতেও বৃষ্টি বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘১০ জেলায় ৩৬ লক্ষ মানুষ বন্যা দুর্গত। এদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে এমন বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি (প্রধান উপদেষ্টা)। এখন পর্যন্ত কোন নিখোঁজ মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রণব ভার্মা প্রথমবারের মতো প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে দেখা করেছেন। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে ভারত সবসময়ই আগ্রহী। ভারতের সাথে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। ইউনুস সেন্টারের সাথে ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও তার কাজ রয়েছে। এই সুসম্পর্ক অবশ্যই চলমান থাকবে, সুন্দর সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। ’
পানি বণ্টন চুক্তি নিয়েও ভারত–বাংলাদেশ কাজ করবে বলে বৈঠকে ড. ইউনুস জানিয়েছেন বলে জানান প্রেস সচিব।