গতকাল গভীর রাতে মেলার পর্দা নামলো। এবারের এই দুই মেলায় কমপক্ষে কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। নবান্ন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে বগুড়ার শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় দুটি মাছ মেলা।
নবান্নের এ মাছের মেলা ঘিরে প্রতি বছর দুই উপজেলায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শত বছর ধরে চলে আসছে এ মেলা। মাছের মেলা উপলক্ষে দুই উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ মেয়ে ও জামাতা নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে। মাছের মেলা প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনের আগে থেকেই দাওয়াত দেয়া হয়।
প্রতিটি ঘরে ঘরে মেয়ে ও জামাইদের কদর থাকে। আর মেলা থেকে মাছ কিনতে হয় জামাইদের। পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারা নতুন ধানের চালে নবান্ন করেন। এ মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। নবান্ন উপলক্ষে সেখানে মাছের মেলা বসলেও জমি থেকে নতুন তোলা শাক-সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের পসরাও সাজানো হয় মেলা চত্বরে।
বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলীতে নবান্ন ঘিরে শত বছরের গ্রামীণ মেলা কালক্রমে মাছের মেলা হয়ে যায়। দূর-দূরান্তের মানুষ মাছ কিনতে আসে এ মেলায়। নবান্ন উপলক্ষে শিবগঞ্জ উপজেলার ঘরে ঘরে বড় মাছ ও নতুন সবজি কিনে মেয়ে জামাইসহ স্বজনকে আপ্যায়নের আয়োজন করার রেওয়াজও প্রায় শত বছরের। যে দোকানি যত বড় মাছ মেলায় তুলবেন আর যে জামাই যত বড় মাছ কিনবেন তাদের সুনাম হয় তত।
পঞ্জিকানুসারে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহে প্রতি বছর মাছের মেলা বসে শিবগঞ্জ উপজেলার উথলীতে। উপজেলার উথলী ছাড়াও রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবিপুর, গুজিয়া, মেদনীপাড়া, বাকশন, রহবল, মোকামতলাসহ ২২ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে ছিল উৎসবের আয়োজন। এছাড়া নন্দীগ্রাম উপজেলাতেও একই রকম মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার নাগরকান্দি, হাটকড়ই, ধুন্দার বাজারেও মাছের মেলা বসে। প্রতি বছর এ উৎসবকে ঘিরে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর, রণবাঘায় মাছের মেলা বসে।
উপজেলার উথলী এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মোখলেছার ইসলাম জানান, তিনি গাইবান্ধায় মাছ বিক্রি করেন। এবারের মেলায় তিনি ২২ কেজি ওজনের ব্ল্যাক কার্প ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি প্রায় ১৬ বছর ধরে এ মেলায় মাছ নিয়ে আসছেন। মেলায় ভালো কেনাবেচা হয়।
মাছ বিক্রেতা জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসে। শুধু আশপাশেই নয়, পুরো শিবগঞ্জ উপজেলার মানুষ এখানে নবান্নের বাজার করতে আসেন। উথলী বাজারের ইজারাদার মো. আজিজুল জানান, আগে মেলাটি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ব্যাপকতা লাভ করেছে।