বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন করছে জেলা প্রশাসন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ মেলা চলবে। তখন পর্যটকদের জন্য প্রায় ১৫টির বেশি জিনিসের ওপরে বিশেষ ছাড় থাকবে।
জানা যায়, সাত দিনের বিশেষ ছাড়ে কক্সবাজার ঘুরে যেতে পারবেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসার স্বপ্ন বোনা নিম্ন আয়ের মানুষজনও। খুব কম খরচে তারা থাকতে পারবেন উন্নতমানের আবাসিক হোটেলে, খেতে পারবেন ভালো রেস্টুরেন্টে, আর ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারবেন শহরের সর্বত্র।
জেলা প্রশাসন বলছে, বিশেষ ছাড়ের মধ্যে রয়েছে- হোটেল, মোটেল, এবং গেস্ট হাউসে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, সকল রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর ১৫ শতাংশ ছাড়, বাস ভাড়ায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, হেলিকপ্টার জয় রাইডে ১০ শতাংশ ছাড়, টিউব ভাড়ায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, কিটকট চেয়ার ভাড়ায় ৩৩ শতাংশ ছাড়, ফটোগ্রাফারের মাধ্যমে ছবি তোলা প্রতি পিস ২ টাকা ও প্যারাসেইলিং রাইডে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
এছাড়াও, জেট স্কি/বিচ বাইক রাইডে ৩৩ শতাংশ ছাড়, চাঁদের গাড়ি ভাড়ায় বিশেষ ছাড়, লকার ভাড়ায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, গাড়ি পার্কিংয়ে ৫০ শতাংশ ছাড়, বিমান ভাড়ায় বিশেষ ছাড়, ফান গেমে ৫০ শতাংশ ছাড় ও বিনামূল্যে সার্কাস শো।
পর্যটন মেলার আহ্বায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যটন মৌসুমকে বরণে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল করতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
তিনি বলেন, মেলায় প্রতিদিনই থাকবে নানা আয়োজন। এসবের মধ্যে আছে সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট।
এডিএম ইয়ামিন বলেন, প্রতিবছরই এই আয়োজন করা হয়। তবে গতবারের চেয়ে এবারের আয়োজন হবে ভিন্ন এবং আরও বড়। দুই শতাধিক স্টলের পাশাপাশি নতুনভাবে এবার যোগ হচ্ছে বিচ ম্যারাথন।
তিনি বলেন, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনে এবারের মেলায় রাখা হচ্ছে বিনামূল্যে সার্কাস প্রদর্শনী। লোকাল শিল্পীর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা আসবেন।
এডিএম ইয়ামিন উল্লেখ করেন, কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেট আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা আসবেন। এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে আগত শিল্পীরা পরিবেশন করবেন হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়াপালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওইয়া গানের শিল্পীরা আসবেন। বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর টিম।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী প্রেম সুন্দর ছাড়াও আসবেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। মঞ্চে একেক দিন গাইবেন লিজা, ঐশী, আভাসের তুহিন, রবি চৌধুরী, নিশিতা বড়ুয়াসহ আরও অনেকে। সাত দিন গানে, আড্ডায়, স্পোর্টসসহ বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে পর্যটকসহ এলাকার সকল বাসিন্দাদের মাতিয়ে রাখবে পর্যটন মেলা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটন মেলা উপলক্ষে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বিশেষ সতর্কতা। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা থাকবে সৈকত ও মেলা প্রাঙ্গণ। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তায় সব সময় সজাগ রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে সারা বছরই পর্যটকের পদচারণ থাকে। পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলা কক্সবাজারকে বিশ্বময় আরও সমাদৃত করবে। সেটা মাথায় নিয়ে সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমারাও প্রস্তুত। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিশেষ টিম মাঠে কাজ করবে। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারে জমকালো পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে লোকারণ্য হবে বলে আশা করছি। মেলায় পর্যটকদের চাহিদাসম্পন্ন জিনিসপত্র তুলে ধরা হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটি দেখার মতো পর্যটন মেলা হবে।
আয়োজকরা জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় সৈকতের লাবণী পয়েন্টে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের উদ্বোধন হবে। এর আগে, এ পয়েন্ট থেকে শুরু করে সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত হবে বর্ণাঢ্য র্যালি। সকাল পৌনে ১০টায় হবে বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ র্যালি।