এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ঈশান মাহমুদ শ্রাবণ। তিন বছর ধরে চলে তাদের প্রেমের সম্পর্ক। তারা পরিবারকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন। পরে বিয়ের বিষয়টি জানতে পারে দুই পরিবার। ঈশান মাহমুদ শ্রাবণের পরিবার গরিব হাওয়ায় বিয়ের মাত্র ১১ দিনেই তাকে ডিভোর্স দেন তার স্ত্রী। এতে প্রেমের ব্যর্থতার শোক কাটাতে শ্রাবণ বেছে নিলেন অভিনব পদ্ধতি।
শ্রাবণ বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল ও ব্রহ্মপুত্র নদে ৭টি ডুব দিয়ে নামাজ পড়ে শপথ গ্রহণ করেন- তিনি জীবনে আর কখনো প্রেম ও বিয়ে করবেন না। শপথ গ্রহণ করেই তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন।
গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের পড়াগলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রোববার (১২ নভেম্বর) রাতে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ঈশান মাহমুদ শ্রাবণের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকায়। তিনি ওই এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। তার নানাবাড়ি মেলান্দহে পড়াগলী এলাকায়। তিনি নানির বাড়িতেই বড় হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঈশান মাহমুদের শ্রাবণ পড়াগলী এলাকায় নানাবাড়িতে ছোট থেকে বড় হয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পরে তিনি নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসেন কলেজে ভর্তি হন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর জামালপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় তাদের বাড়িতে চলে যান। এ সময় বাড়ির পাশে এক তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্ক চলে টানা তিন বছর। পরে গত ২৯ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মেয়ের পরিবার শ্রাবণের বাড়িতে আসে। কিন্তু তারা আর্থিকভাবে গরিব হওয়ায় বিয়ের বিষয়টি মেনে নেয়নি মেয়েটির পরিবার।
বিয়ের ১১ দিন পরে গত ৮ নভেম্বর শ্রাবণকে ডিভোর্স দেন তার স্ত্রী। শ্রাবণ এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এর জেরে আবারও তিনি নানাবাড়ি পড়াগলী এলাকায় চলে আসেন। নানাবাড়িতে এসে তার বন্ধুদের নিয়ে একটি স্কুল মাঠে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করেন এবং পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করে শপথ গ্রহণ করেন- তিনি আর কখনো জীবনে প্রেম ও বিয়ে করবেন না।
শ্রাবণের নানা হেলাল উদ্দিন বলেন, শ্রাবণ আমার নাতি। আমাদের পাশাপাশি বাড়ি। বৃহস্পতিবার আমাকে বলে দুধ লাগবে ২০ কেজি। বললাম কি জন্য লাগবে। পরে বলল একটা কাজ আছে। পরে আরেকজনের কাছ থেকে ২০ কেজি দুধ নিয়ে স্কুল মাঠে গোসল করে শপথ গ্রহণ করেছে জীবনে বিয়ে ও প্রেম করবে না। শ্রাবণ প্রেম করে বিয়ে করেছিল। বিয়ের ১১ দিন পরেই বউ তাকে তালাক দিয়েছে। এ জন্য শ্রাবণ এমন কাণ্ড করেছে।
এমদাদুল হক নামে একজন বলেন, ছেলেটি প্রেম করে বিয়ে করেছিল। ছেলের পরিবার গরিব হওয়ায় মেয়ের পরিবার বিষয়টি মানেনি। মেয়েটিকে জোর করে তার ভাই ও বাবা ডিভোর্স দেওয়াতে বাধ্য করেছেন। এতে ছেলেটি আঘাত পেয়ে ১ মণ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন। একই সময় ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করে নামাজ পড়ে শপথ করেছেন তিনি আর কখনো প্রেম ও বিয়ে করবেন না।
শ্রাবণের নানি রওশনারা বলেন, কাউকে না জানিয়ে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। বিয়ের ১১ দিন পরেই ডিভোর্স দেয় মেয়েটি। ডিভোর্স দেওয়ার পর শ্রাবণ মন খারাপ করে বসে থাকতো। খাইতো বললেও খাইতো না। না খেয়ে বসে থাকতো। পরে শুক্রবার স্কুল মাঠে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করে শপথ করেছে যে কখনো আর প্রেম ও বিয়ে করবে না। পরদিন শ্রাবণ ঢাকায় চলে গেছে।
ঈশান মাহমুদ শ্রাবণ বলেন, একই কলেজে পড়তাম। তারপরে পরিচয় ভালো লাগা প্রেম, প্রায় তিন বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল আমাদের। কিছু দিন আগে আমরা কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করেছি। বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়েকে জোর করে ধরে ডিভোর্স দিয়েছে। আমি ৮ তারিখে ডিভোর্সের কাগজ পেয়েছি। ডিভোর্সের কাগজ পাওয়ার পর কি করবো এটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। শুক্রবার দুধ দিয়ে গোসল করে শপথ করেছি আর জীবনে প্রেম ও বিয়ে করবো না।