যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, কোথা থেকে স্বর্ণ আসে, তাহলে হয়তো এক বাক্যে অনেকে বলবেন, খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু আসলেই কি তাই? ডিসকভারি চ্যানেলের গোল্ড রাশ আলাস্কা দেখে অনেকে হয়তো বলতে পারেন, কাদামাটি থেকে স্বর্ণ আলাদা করা হয়। এত মূল্যবান ধাতুর উৎপত্তি কি এতটাই সহজ?
স্বর্ণের উৎপত্তি সম্পর্কে জানার জন্য একটু আকাশের তারার দিকে তাকাতে হবে, ফিরে যেতে হবে কোটি কোটি বছর আগে, পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর পর মাত্র ৩টি এলিমেন্ট হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং লিথিয়াম দিয়ে সর্বপ্রথম স্টার বা তারা গঠিত হয়েছিল। আপনারা হয়তো ভাবছেন মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া তারার সঙ্গে স্বর্ণের কী কানেকশন রয়েছে? এখানেই রহস্য।
বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরজগৎ তৈরির বহু আগে সুপারনোভা ও নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর যাবতীয় স্বর্ণের সৃষ্টি হয়েছে। স্বর্ণ উৎপত্তির সেই মহাজাগতিক প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের কাছে আর-প্রসেস, অর্থাৎ র্যাপিড নিউট্রন ক্যাপচার প্রসেস নামে পরিচিত। এ বিষয়ে বলার আগে প্রথমে জানতে হবে পিরিয়ডিক টেবিলে গোল্ডের অবস্থান সম্পর্কে। দেখা গেছে, গোল্ডের পারমাণবিক ভর ৭৯, অর্থাৎ এটি একটি হেভি এলিমেন্ট। সূর্যের মধ্যে অনবরত ফিউশন বিক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন পদার্থ উৎপন্ন হলেও এতো ভারী মেটাল তৈরি হওয়া সম্ভব না। এ শক্তি তখনই পাওয়া সম্ভব যখন কোনো সুপারনোভায় নক্ষত্রের বিস্ফোরণ ঘটে অথবা নিউট্রন স্টারের সঙ্গে এর সংঘর্ষ হয়। শুধু এমন পরিস্থিতিতেই আর-প্রোসেসের মাধ্যমে সোনার মতো ভারী পরমাণুগুলো তৈরি হতে পারে। আর এ থেকে এটি পরিষ্কার যে পৃথিবীর সব স্বর্ণের উৎপত্তি হয়েছে মৃত নক্ষত্রের ডেবরিস বা ধ্বংসাবশেষ থেকে।
এখন প্রশ্ন হলো, পৃথিবী এমনকি সৌরজগৎ সৃষ্টির আগে স্বর্ণ তৈরি হয়ে থাকলে গোল্ড কীভাবে পৃথিবীর একটি এলিমেন্ট হয়ে গেল? উত্তরটা সহজ, পৃথিবীর অন্যতম গঠন উপাদান হলো এই সোনা। পৃথিবীর কেন্দ্র, যাকে ‘কোর’ বলা হয়, সেটি গঠিত হওয়ার সময়ই এর অন্যতম গাঠনিক উপাদান হিসেবে স্বর্ণ অন্তর্ভুক্ত হয়। মূলত পৃথিবী সৃষ্টির সময় এর কেন্দ্রে লোহা ও সোনার মতো ভারী ধাতুগুলো জমা হয়েছে।
আজ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন গ্রহাণুর সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর অনেক গভীর পর্যন্ত কেঁপে উঠত এবং বেশ কিছু সোনা পৃথিবীর উপরিভাগের স্তরগুলোতে জমা হয়েছিল। এ কারণে বিভিন্ন শিলাতেও সোনার সংমিশ্রণ থকতে পারে। এমনকি বিভিন্ন শিলার মধ্যে খাদ হিসেবেও সোনা ও রুপা মিশ্রিত থাকতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, শিলার ক্ষয় হয়ে সোনা ও অন্যান্য ধাতুসমূহ অবমুক্ত হয়েছে। স্বর্ণ অনেক ভারী হওয়ায় তা ডুবে যায়, তাই সমুদ্রের নিচেও এর খনি পাওয়া যায়।
পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে মানুষ সোনা তুলে আনেনি, বরং বিভিন্ন সময় বিশেষ করে পৃথিবীর বয়স যখন কম, তখন এর সঙ্গে বিভিন্ন গ্রহাণুর সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ভয়াবহ সংঘর্ষ এবং ভূতাত্ত্বিক বিভিন্ন কারণে, ভূমিকম্প কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ভূ-অভ্যন্তর থেকে অনেক সোনা মানুষের হাতের নাগালের দূরত্বে এসে পৌঁছেছে, যা এখন খনিতে গর্ত করে উত্তোলন করা হয়।
এ ধাতুটি বেশ দুর্লভ। এটি নমনীয় একটি ধাতু। এটি অন্যান্য ধাতুর চেয়ে কম সক্রিয়, অর্থাৎ ওয়ান অব দ্য লিস্ট রিয়্যাক্টিভ কেমিক্যাল এলিমেন্টস। এটি প্রায় সব এসিডেই রেসিস্ট্যান্ট। আর এ কারণেই অন্যান্য সাধারণ ধাতুর মতো সোনা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি বেশ ভালো ইলেকট্রিক কন্ডাক্টর। এক কথায় স্বর্ণের সৌন্দর্য, চাকচিক্য ও ক্ষয়হীন বৈশিষ্ট্য একে অন্য সব ধাতুর থেকে অনন্য করেছে। আর এসব কারণেই এটি সবার কাছে খুব মূল্যবান।
তাত্ত্বিকভাবে পারদ বা মারকিউরি থেকে নিউক্লিয়ার ফিউশন ও তেজস্ক্রিয় ক্ষয় বিক্রিয়ার সাহায্যে স্বর্ণ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে পরীক্ষামূলকভাবে সোনা তৈরি বেশ ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। আর এভাবে স্বর্ণ তৈরি করা হলে এর দামও অনেক বেশি হবে। তার চেয়ে খনি থেকে সোনা উত্তোলন কিংবা কীভাবে নতুন সোনার খনি পাওয়া যায়, সেদিকে মনোযোগ দেয়া সহজ।
এ পর্যন্ত পৃথিবীতে ২ লাখ টন স্বর্ণ উত্তোলন করা হয়েছে, যা প্রায় ৪টি অলিম্পিক সাইজ সুইমিংপুলের সমান। ভাবছেন, এই বুঝি স্বর্ণের মজুত শেষ হয়ে গেল? আসলে তা না। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরের ১ কিলোমিটারের মধ্যে আরও ১ লাখ টন সোনা আছে।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.