গত প্রায় ৫০ বছর ধরে বলিভিয়ার আমাজন জঙ্গলের নদীগুলোতে মাছ ধরেন গিলের্মো ওট্টা পারুম। আগে সাধারণত মিঠা পানির ক্যাটফিশ জাতীয় মাছ ধরতেন তিনি। কিন্তু পরে সেখানকার জলাশয়ে আগমন ঘটে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘পাইচে’ মাছের। দৈত্যাকৃতির মিঠা পানির এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম আরাপাইমা গিগাস।
স্থানীয়রা মাছটির আকার দেখে এটিকে প্রথমে বিষাক্ত সাপ মনে করেছিলেন। তবে আদতে এটি মূলত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিঠাপানির মাছ। পাইচে দৈর্ঘ্য প্রায় চার মিটার এবং ওজনে প্রায় ২০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ধারণা করা হচ্ছে, পাইচে মাছটি প্রতিবছর আমাজন বেসিনের নদীসমূহের আরও প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত গভীরে চলে যাচ্ছে। এ মাছের আকার এবং খাদ্যাভ্যাস বলিভিয়ার স্থানীয় প্রজাতির মাছের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করেন বেনি অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যাকোয়াটিক রিসোর্সেস রিসার্চ-এর পরিচালক ফেদেরিকো মরেনো।
পাইচে মাছ নদীর বিভিন্ন অংশ পুরোপুরি দখল করে স্থানীয় মাছের আবাসস্থল নষ্ট করে। ফলে স্থানীয় এসব মৎস্য প্রজাতি আরও গভীরে দুর্গম অঞ্চলে আশ্রয় নেয়।
কবে থেকে বলিভিয়ার নদীতে পাইচে মাছের আগমন তা স্পষ্ট জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, মাছটির আদি আবাসস্থল পেরুর পাইচে চাষের খামার থেকে নদীতে ছড়িয়ে পড়ে এই মাছ।
জীববিজ্ঞানী ও পাইচে বিশেষজ্ঞ ফারনান্দো কারভাহাল জানান, পাইচে মাছের প্রভাব সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকলেও স্থানীয় জেলেদের মতে অনেকগুলো প্রজাতির দেশি মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে পাইচে মাছ আরও বেড়ে গেলে অন্যান্য মাছ হারিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পেছনে প্রাণীদের আবাসস্থল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আরেকটি বড় কারণ হলো দখলদার প্রজাতির প্রাণীর আগমন।
তবে বলিভিয়ার জেলেদের কাছে পাইচে মাছের আগমন অনেকটা আশীর্বাদের মতোই হয়েছে। প্রথমে ভয় পেলেও এখন এ মাছে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন তারা।
পাইচে সাধারণত টুকরো হিসেবে বিক্রি হয়। শুরুতে এটিতে ক্যাটফিশ জাতীয় মাছ বলে বিক্রি করলেও এখন বলিভিয়ার প্রায় সব অঞ্চলেই খাওয়া হয় এ মাছ। যদিও আমাজনের বিস্তৃত জলাভূমিতে এটি খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য।
পাইচে মাছের প্রক্রিয়াজাতকারক এডসন সিলভানো প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার কেজি পাইচে মাছ প্রক্রিয়াজাত করেন।
বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে নৌকা বা ক্যানো নিয়ে এ মাছ ধরার জন্য জেলেদের রয়েছে বিশেষ লাইসেন্সের ব্যবস্থা। এসব জেলেরাই পাইচে মাছ ধরার মাধ্যমে এর বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে আশা করছেন ফেদেরিকো মরেনোর মতো বিজ্ঞানীরা।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.