অভিনব উপায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদাহরণ তৈরি করলো আমেরিকা। অপরাধীর অপরাধ বিচার করেন বিচারক। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের কৌশলগুলো আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মৃত্যুদণ্ড মানেই আসামিকে ফাঁসি দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েকটি দেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। চিন, ভিয়েতনাম ও আমেরিকাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে। আবার আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, প্যালেস্টাইন, সোমালিয়ার মতো দেশেগুলোতে গুলি করে আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
কেনেথ স্মিথ।সম্প্রতি আমেরিকায় এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করেছে। ওই আসামির নাম কেনেথ স্মিথ। তিনি ১৯৮৮ সালে এলিজাবেথ সেনেট নামে এক নারীকে খুন করেন। কেনেথ ছিলেন ভাড়াটে খুনি। স্ত্রীকে খুন করার জন্য এক হাজার ডলারের বিনিময়ে কেনেথকে ভাড়া করেছিলেন চার্লস সেনেট নামে এক ব্যক্তি। যদিও পরে চার্লস আত্মহত্যা করেন।
এলিজাবেথকে খুন করার জন্য কেনেথ স্মিথের বিচার চলছিল। নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড সাজা উচ্চ আদালত হয়ে সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকে। ২০২২ সালে এক বার কেনেথকে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে ঠিক করা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত হয়। পরে আমেরিকার অঙ্গরাজ্য আলাবামার গর্ভনর আবার কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। শেষ পর্যন্ত ২৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে ‘মারা’ হয় তাকে।
বিশ্বে প্রথম এই উপায়ে শাস্তি দেওয়া হল কাউকে। কেনেথের মুখে একটি মাস্ক আটকে দেওয়া হয়। ঠিক যেভাবে কোনো রোগীকে মাস্কের মাধ্যমে অক্সিজন দেওয়া হয়, সেই প্রক্রিয়াই কেনেথের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু অক্সিজেনের পরিবর্তে ছিল নাইট্রোজেন। অক্সিজেন চলাচলের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয় কেনেথের। যতক্ষণ তার জ্ঞান ছিল ততক্ষণ মৃত্যু যন্ত্রণায় চিৎকার করেছিলেন। তারপর অবসন্ন হয়ে পড়েন। শেষে তার মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, নাইট্রোজেন মাস্ক মুখে পরানোর আগে কেনেথ শেষ কথা বলেছিলেন, আজ মানবিকতাকে আরও এক ধাপ পেছনে নিয়ে গেল আলাবামা। ৩৬ বছর আগে করা সেই খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত কেনেথের শাস্তি কার্যকর হল। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে স্ত্রী সন্তানের উদ্দেশে কেনেথ বলেন, ভালোবাসা এবং শান্তি নিয়ে আমি পৃথিবী ত্যাগ করছি। তোমরা দুঃখ পেয়ো না।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠক করে কেনেথের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন আলাবামা কারা বিভাগের কমিশনার জন হ্যাম। তিনি বলেন, অনেক ক্ষণ পর্যন্ত শ্বাস ধরে রেখেছিলেন কেনেথ। শেষ পর্যন্ত বাঁচার লড়াই ছেড়ে দেন তিনি।
এভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘোর বিরোধী ছিলেন আমেরিকার মানবাধিকার কর্মীরা। এমনকি নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার অনুরোধও করা হয়েছিল। কিন্তু আলাবামা প্রশাসনের যুক্তি ছিল, নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করার প্রক্রিয়া সবচেয়ে ব্যথাহীন মৃত্যু!
এর আগেও আমেরিকা গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। ১৯৯৯ সালে খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সেবার হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মারা হয়। এবার নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করলো দেশটি।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.