গোপালগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা, যশোর, বেনাসেহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পদ্মাসেতু হয়ে সহজেই ট্রেনে ঢাকা যেতে পারবেন। নব নির্মিত ভাঙ্গা-কাশিয়ানী-যশোর রেল লাইন এ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ অঞ্চলের মানুষ খুলনা থেকে ৩ ঘন্টা ও যশোর থেকে মাত্র আড়াই ঘন্টায় পৌঁছে যাবে রাজধানীতে। ঢাকা থেকে যশোরের দূরত্ব¡ কমবে ১৯৩ কিলোমিটার । ওই রুট ব্যবহার করে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা ও বোনপোলে সরসরি ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ছেন স্থানীয়রা।
ইতিমধ্যে রেল লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ ও ৩১ মার্চ নব-নির্মিত এ ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার রেল লাইনে পরিক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করেছে। আর এ রেল লাইনে যে কোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল শুরু করবে ট্রেন। এজন্য এ অঞ্চলের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। এতে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া কম সময়ে যাত্রী পরিবহন, উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহন সহজ হবে। তাই গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে সূত্রমতে, এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটির অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফরিদপুরের ভাংগা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার মিটার রেল লাইন স্থাপনে ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ (সিআরসি) এ রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। সেই সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পের পরার্মশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে। ভাঙ্গা যশোর অংশের ট্র্যাক ইনচার্জ আনোয়ারুল কবির বলেন, নতুনএ ট্র্যাক করা হয়েছে চীনা প্রযুক্তিতে। ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিটের স্লিপার। এটি যেমন টেকসই, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক কম হবে। নতুন এ রেললাইন দেশের রেল নেটওয়ার্ককে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, আগামী জুলাইয়ে নতুন রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তদারকিতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রডগেজে নতুন রেললাইন স্থাপন করেছে।
পিডি আরে বলেন, ‘ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজ শেষে চলেছে ট্রায়াল রান। এরপর পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রুটে সোজা পথে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলবে। নতুনএ রেলপথ চালু হলে যশোর থেকে দূরত্ব কমবে অন্তত ১৯৩ কিলোমিটার। যুক্ত হতে পারবে ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কে।
গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি আলহাজ¦ মোশাররফ হোসেন বলেন, এ রেল লাইন ব্যবহার করে ঢাকা ও বেনাপোল রুটে গোপালগঞ্জ থেকে ট্রেন চালুর দাবি জানাচ্ছি। ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে, গোপলগঞ্জ, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল ও খুলনার মধ্যে যাতায়াত সহজ হবে। উদ্যোক্তারা বেনাপোল স্থল বন্দরের আমদানী-রফতানী পণ্য সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজে পরিবহন করতে পারবেন। এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন-নতুন শিল্প কলকারখানা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
গোপালগঞ্জের ব্যবসায়ী লিমন বশার বলেন, কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে। উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও মালামাল সহজে পরিবহন করতে পারব। ফলে সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে। কৃষকরা সহজে পণ্য বাজারজাত করতে পারবেন। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। গ্রামীণ অর্থণীতিতে সঞ্চারিত হবে নতুন গতি।-বাসস