গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে পলাতক আছেন পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এর মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদও।
গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়ার মূল কুশীলব ছিলেন হারুন। শুধু তাই নয়, সমন্বয়কদের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার ছবি এবং তাদের দিয়ে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি।
সমন্বয়কদের হেফাজতে রেখে আটকে রাখার ঘটনাকে জাতির সাথে মশকরা করে তখন মন্তব্য করেন উচ্চ আদালত। হারুনের হটকারি সিদ্ধান্তের পরও আন্দোলন দমানো যায়নি। বরং আন্দোলনে গতি পায়নি সরকার পতনের পর এখন লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন এই আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা।
গত ১ আগস্ট হারুনকে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস শাখায় পদায়ন করা হয়। নতুন অফিসে সবশেষ ২ আগস্ট দায়িত্ব পালন করেছিলেন হারুন। এরপর থেকেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন সামাজিকমাধ্যমে নেটিজেনদের কৌতূহল কোথায় আছেন হারুন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন হারুন। নিজের বাসা এমনকি আত্মীয়স্বজন কারো বাসাতেই থাকছেন না তিনি। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার রাস্তায় জনতার ঢল নামে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ইউনিফর্ম খুলে ফেলেন।
গেঞ্জি বা অন্য কোনো পোশাক পরে সেন্ট্রাল কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিট ভবনের পেছনের প্রায় ১৩ ফুট দেয়াল টপকে পুলিশ সদর দপ্তরের সামনের রাস্তায় পড়েন। ঠিক একই কায়দায় দেয়াল টপকাতে গিয়ে পায়ে ও শরীরের নিচের অংশে ব্যাপক আঘাত পান ডিআইজি হারুন অর রশীদ। পরে সেখান থেকে তিনি আইজিপির সাথে চলে যান পুলিশ সদর দপ্তরে।
বিকালে পরিস্থিতি বুঝে পুলিশ সদর দপ্তর সংলগ্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেয়াল টপকে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান হারুন। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, কূটনৈতিক এলাকায় একটি দূতাবাসে আশ্রয় নেন হারুন। স্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে পালাতে যোগাযোগ করেন মার্কিন দূতাবাসে। তবে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয় দূতাবাস। পরে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন।
আরেকটি সূত্র বলছে, বিমানবন্দর দিয়ে অন্য কোনো দেশে পালানোর চেষ্টা করেন হারুন। সাধারণ মানুষকে ফাঁকি দিয়ে গাড়িতে করে পৌঁছেও যান বিমানবন্দরে। তবে বিমানবন্দের টার্মিনালে প্রবেশের আগেই জনতা তাকে দেখে চিনে ফেললে, গণপিটুনির শিকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় সেখান থেকে নিয়ে তাকে যাওয়া হয় রাজধানীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হারুন সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
২০২২ সালের ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান হারুন অর রশীদ। তার আগে ২০২১ সালের মে মাসে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হিসেবে গোয়েন্দা বিভাগে পদায়ন হয় তার। এর আগে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১ সালের জুলাইয়ে জাতীয় সংসদের সামনে এক মিছিলে তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুককে মারধর করে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি