শেখ হাসিনার পতনের পর তার দলের মন্ত্রী-এমপিরা কেউ পালিয়ে গেছেন আবার কেউ আছেন আত্মগোপনে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন। তাদের মধ্যে ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হকার শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয় সালমান এফ রহমানকে। বুধবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
তিনি এখন ডিবি হেফাজতে আছেন। ডিএমপি সূত্র জানায়, তার অপরাধ শুধু পুলিশ কেইসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শেয়ারবাজারসহ অনেক অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত সালমান এফ রহমান। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে হত্যা মামলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়, বিগত সরকারের অপকর্ম ও দুর্নীতিসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি অজানা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। গত বুধবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সালমান এফ রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ডিবির এক কর্মকর্তা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান দুজনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই দেশের এই অবস্থা।’ এ সময় তিনি নির্বিকার ছিলেন।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সালমান এফ রহমান মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। তিনি বিশ্বাসই করতে চাচ্ছেন না যে এত তাড়াতাড়ি আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। জিজ্ঞাসাবাদে দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরির জন্য তিনি ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দুই মন্ত্রীকে দোষারোপ করেছেন। তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুল হক বলেন, ‘দেশে ছাত্র অন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমি একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। আন্দোলন দমনে তারা খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিলেন। এ ছাড়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বাস্তবতা বোঝানো যাচ্ছিল না। এ কারণে আন্দোলন একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’
সালমান এফ রহমান যে মামলায় রিমান্ডে আছেন ওই মামলায় কোনো আসামির নাম নেই। তবে অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
তাহলে কি সালমান এফ রহমান বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলা হলো ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট। তদন্তের পরই প্রকৃত সত্য উঠে আসবে। যিনি এফআইআর করেন তিনি তার মতো করে ঘটনা বর্ণনা করেন। উনি যা জানেন তা-ই প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করেন। এ জন্যই সেটির নাম প্রাথমিক তথ্য বিবরণী। তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা উঠে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো এমনিতেই হয়নি। কী কারণে ঘটেছে, কেন ঘটেছে সবই তদন্তে উঠে আসবে।’