সদ্য মা হয়েছেন ক্রিস্টেল ক্যান্ডেলারিও। মাত্র ১৬ মাসের সন্তান জাইলিন। বাড়িতে তাকে একা ফেলে রেখে দশ দিনের জন্য ডেট্রয়েট, মিশিগান আর পুয়ের্তো রিকো ঘুরতে গিয়েছিলেন ক্রিস্টেল। যাওয়ার সময় মেয়ের সামনে কয়েক বোতল দুধ দিয়ে যান তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই ক্ষুধায় কাঁদতে কাঁদতে মৃত্যু হয়েছে জাইলিনের।
কুয়াহোগা কাউন্টির প্রসিকিউটর মাইকেল সি ও’ম্যালি ২০২৩ সালের জুন মাসে ১৬ মাসের মেয়ে জাইলিন ক্যান্ডেলারিওকে হত্যার দায়ে গত সোমবার (১৮ মার্চ) মা ক্রিস্টেল ক্যান্ডেলারিওকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ক্রিস্টেলের যাবজ্জীবন জেল হয়েছে। বাকি জীবনটা কারাগারেই কাটাতে হবে তাকে। ক্রিস্টেলের প্রতিবেশীরা বলছেন, “উচিত শাস্তি হয়েছে”।
মামলার শুনানির সময় প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, ক্যান্ডেলারিও মেয়েকে প্যাক-এন-প্লে প্লেপেনে রেখে ঘুরতে চলে যান।
সহকারী কুয়াহোগা কাউন্টি প্রসিকিউটর আনা ফারাগ্লিয়া ৬ জুন ক্যান্ডেলারিওকে তার স্যুটকেস নিয়ে বের হয়ে ১৬ জুন বাড়িতে ফিরে আসার ভিডিও দেখান আদালতে৷ দশ দিন পর বাড়ি ফিরে দেখেন, মেয়ে নড়াচড়া করছে না। সঙ্গে সঙ্গে ৯১১-এ ফোন করেন ক্যান্ডেলারিও। চিকিৎসকরা আসেন। তারা জেলিনকে পরীক্ষা করে জানান, মেয়ে মারা গিয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, মৃত্যুর কারণ ডিহাইড্রেশন এবং অনাহার। প্রসিকিউটর জানান, জরুরি সেবা আসার আগে অপরাধ ঢাকার জন্য ক্যান্ডেলারিও জাইলিনকে একটি পরিষ্কার পোশাক পরিয়েছিলেন। কিন্তু পোশাকের পরিবর্তন মেয়েটি যে ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল তা লুকিয়ে রাখতে পারেনি। এরপর ক্যান্ডেলারিওর নির্মমতার গল্প উদ্ঘাটিত হতে শুরু করে।
ফারাগলিয়া বলেন, ‘জাইলিনকে প্রস্রাব ও মল ঢাকা একটি গদিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পশুরাও তাদের শিশুদের আরও ভালোভাবে যত্ন নেয়।’ দুর্বল, ফ্যাকাসে চোখ, শুকনো ঠোঁট, মুখ এবং নখের মধ্যে মল লেগে ছিল জাইলিনের। মৃত্যুর দুই মাস আগের তুলনায় তার ওজন সাত পাউন্ড কম ছিল।
একজন মা কীভাবে এই কাজ করতে পারেন? অবাক বিচারকও। সাজা ঘোষনার সময় কাউন্টি কমন প্লিজ কোর্টের বিচারক ব্রেন্ডন শিহান এটাকে “চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “মেয়েকে যেমন বন্দি করে রেখেছিলেন, বাকি জীবনটা আপনাকেও সেভাবে কাটাতে হবে”। ক্যান্ডেলারিও আদালতে জানান, তিনি ডিপ্রেশনে ভুগতেন। কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনাও প্রকাশ করেন। তবে বিচারক শেষ পর্যন্ত কোনো প্যারোল ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
সাজা ঘোষণার পর, প্রসিকিউটর ও’ম্যালি এবং ক্লিভল্যান্ড ডিভিশনের পুলিশ প্রধান ডরোথি টড জেলিনের মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য শোকপ্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি জানান, এই ধরনের ঘটনায় দোষীদের কড়া শাস্তির সবরকম ব্যবস্থা করবেন তারা। বিচারক ও’ম্যালি একে “মায়ের অকল্পনীয় স্বার্থপরতা” আখ্যা দেন।
তিনি বলেন, “পিতামাতা দায়িত্বের অবহেলা করলে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে, এটা তার উদাহরণ”। পাশাপাশি কোনও কঠিন শাস্তিই শিশু জাইলিনকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না বলেও দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি।